দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টে মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়ন প্রয়োজন

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টে মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়ন প্রয়োজন
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারে 'ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এই খাতের উন্নয়ন সাধনের অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিনিযোগকারীরা বেশি মুনাফা লাভ করতে না পারলেও যেন কোনভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন না হোন তার জন্য বিএসইসি কাজ করছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের শিল্পায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার হচ্ছে যা অদৃঢ় ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামী ৫ বছর হবে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড খাত ভালো করছে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে এই খাতের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি বলে জানান তিনি। সামনের দিনগুলোতেও বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারা ধরে রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এসময় বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শনিবার সকাল ১০ টায় কক্সবাজারের ইনানিতে অবস্থিত সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড হোটেলে কনফারেন্স অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মো. আবদুল হালিম। এছাড়াও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে বিএসইসি, ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড (এএএমসিএমএফ) এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি কনফারেন্সে অংশ নেয়া সকলকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে বিকশিত করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে সকল অংশীজনের সাথে একসাথে কাজ করার কথা বলেন এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে ডিএসই কাজ করছে বলে জানান।

কনফারেন্স অনুষ্ঠানে ‘কারেন্ট স্টেট অ্যান্ড ফিউচার ডিরেকশন অব মিউচুয়াল ফান্ড অ্যান্ড কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস্ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। তিনি তথ্যবহুল উপস্থাপনায় বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের সাথে দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দেশে এই খাতকে আরো বর্ধিত করা যায় সেবিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। দেশে মিউচুয়াল ফাও খাতের সম্প্রসারণের জন্য আগামীতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিধিবিধান ও নীতি সংশ্লিষ্ট পুনর্গঠন প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএসইসি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে কাজ করছে। তার বিশ্লেষণী ও তথ্যবহুল প্রেজেন্টেশন উপস্থিত সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে সকলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

কনফারেন্স অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের (এএএমসিএমএফ) প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম। তিনি বলেন, বিশ্বে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে মিউচুয়াল ফান্ডের ৩০০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিরা একইসাথে দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী এবং পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি সকলকে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর উত্তরণে কাজ করার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার মো. আবদুল হালিম। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার এখনও অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। আমরা দেশের পুঁজিবাজারকে উন্নত ও স্মার্ট পুঁজিবাজারে পরিণত করতে কাজ করছি। তিনি অংশীজনদের সকলকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এই খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা বলেন।

অর্থনৈতিক সকল সূচকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মিউচুয়াল ফান্ড খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। তিনি উপস্থিত সকল অংশীজনদের পরামর্শ ও মতামত দেয়ার অনুরোধ করেন এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো এগিয়ে নিতে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে এখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম অর্জন প্রয়োজন এবং এ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার। মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে আরো বিকশিত করতে এ খাত সম্পর্কে সকলকে আরো জানানো প্রয়োজন এবং প্রচার প্রয়োজন। তিনি আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অধিক রিটার্ন দেয়ার সুযোগ-সম্ভবনাকে কাজে লাগনো উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে বিকশিত করতে দেশের পুঁজিবাজারের ইক্যুইটি মার্কেটেরও উন্নয়ন প্রয়োজন এবং তার জন্য দেশের পুঁজিবাজারের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তি প্রয়োজন। তিনি ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেষ্ট হতে অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ‘টেকনোলজি ফর ট্রান্সফারেন্সি অ্যান্ড লিকুইডিটি অব মিউচুয়াল ফান্ড অ্যান্ড আদার্স কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনা আলোচক হিসেবে অংশ নেন এএএমসিএমএফ'র প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো শামীম আহসান, ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) আবু তাহের মোহাম্মদ খায়রুল বাশার এবং সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক। প্যানেল আলোচনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড এবং অন্যান্য কালেকটিভ বিনিয়োগ স্কীমের তারল্য এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচকবৃন্দ আগামীতে দেশে মিউচুয়াল ফান্ড এবং অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড খাতের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি আরোও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর কনফারেন্স অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়াংশে বিএসইসির পরিচালক মো. মাহমুদুল হক ‘রেগুলেটরি ওভারসাইট অব অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্রাস্টি অ্যান্ড কাস্টোডিয়ান’ শীর্ষক উপস্থাপনা প্রদান করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়াংশে ‘অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং অ্যান্ড রিপোটিং অব কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস্’ বিষয়ে হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানির সাব্বির আহমেদ এবং ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফর এক্সচেঞ্জ ট্রেড ফান্ড (ইটিএফ)’ বিষয়ে সাদাত মান্নান প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।

কনফারেন্স অনুষ্ঠানের শেষাংশে বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ‘ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনফারেন্স অনুষ্ঠানে আগত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে এবং দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি কনফারেন্স অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত