৩০০ মেগাওয়াটের এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই জমি দেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
বেসরকারি খাতের কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড ও ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেড বেসরকারি অংশীদার হিসেবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করবে। সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিল্ড-ওউন-অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকবে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি এসিডব্লিউএ পাওয়ারের।
বুধবার (৩০ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ট্যারিফ প্রস্তাব অনুমোদন পেতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবিএম জিয়াউল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সম্প্রতি তারা এমন একটি প্রস্তাব পেয়েছেন।
'এখন বিপিডিবি চেয়ারম্যানের উইং প্রস্তাবটি যাচাই করছে,' জানান তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে আরেকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জমি রয়েছে বিপিডিবির। সেই জমিতেই ৩০০ মেগাওয়াটের এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে প্রায় ৯০০ একর জমি লাগবে।
দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র
কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার কাওসার আলী বলেন, 'এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। আমরা বিপিডিবি ও এসিডব্লিউএ পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এই কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছি।'
কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেডের টেক্সটাইল কারখানাগুলো গ্রিন এবং প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত বলে জানান তিনি।
'আমরা ইতিমধ্যেই গ্যাস ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক শাহজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মিডল্যান্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছি। কেন্দ্র দুটিতে মোট ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে আমাদের গ্রুপ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে,' বলেন কাওসার।
কর্মকর্তারা জানান, সৌদি আরবের এসিডব্লিউএ পাওয়ার বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কোম্পানি। কোম্পানিটি এখন প্রায় ৫৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশে ১ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য গত বছরের নভেম্বরে বিপিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে এসিডব্লিউএ পাওয়ার।
এছাড়াও সৌদি আরবের কোম্পানিটি বাংলাদেশে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রাকৃতিক গ্যাস/আর-এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিপিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড ও ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, রামপালে ৩০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান অংশীদার ও বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকবে এসিডব্লিউএ পাওয়ার।
তবে বিপিডিবি ও দেশীয় দুই বেসরকারি কোম্পানির মালিকানার হিস্যা কত, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি কর্মকর্তারা।
বাস্তবায়নে আড়াই বছর লাগবে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উৎপাদনে যেতে এখন থেকে প্রায় আড়াই বছর সময় লাগবে। প্রথম পর্যায়ের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পর একই স্থানে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৪০০ মেগাওয়াটের আরেকটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধে সরকার নতুন করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য শক্তি ও সৌরবিদ্যুতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
গত মাসে ২০০ মেগাওয়াটের তিস্তা সোলার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলেছে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড।
এছাড়া রামপালে ৩৫০ একর জমির ওপর একটি সোলার পার্ক গড়ে তুলেছে ওরিয়ন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনার্জন রিনিউয়েবলস। এ পার্ক থেকে জাতীয় গ্রিডে ১৩৪.৩ মেগাওয়াট পিক (সৌরশক্তি পরিমাপক ইউনিট) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
সোলার থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সরকারের
২০২৫ সালের মধ্যে সৌর, জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার পেছনে ছুটছে সরকার।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের জন্য এসব উৎস থেকে কমপক্ষে ১২ শতাংশ বিদ্যুতের প্রয়োজন।
বিপিডিবির তথ্য বলছে, দেশের ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ২২ টাকা। এলএনজি গ্যাসে ১০ টাকা, বড়পুকুরিয়ার কয়লাবিদ্যুতে ৪ টাকা, আমদানি করা কয়লাবিদ্যুতে ৬ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১২ টাকা ব্যয় হয়। তবে এসব বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব নয়।
সোলারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৮ থেকে ১০ টাকা। আর দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় সময়ভেদে ৩০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত পড়ে।
অর্থসংবাদ/এমআই