আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামে। বিশ্বের ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের বিষয়ে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। এটি মূলত একটি তাৎক্ষণিক মেসেজিং ব্যবস্থা, যা কোনো লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহককে জানিয়ে দেয়। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের মধ্যকার বার্তা আদান-প্রদানের কাজে সুইফট ব্যবহার করে।
সুইফটের তথ্য বলছে, বৈশ্বিক বিনিময়মাধ্যম হিসেবে ইউরোর অবস্থান রেকর্ড নিচে নেমে এসেছে। চলতি বছরের আগস্টে লেনদেনের ২৩ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে ইউরোয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঢের কম। গত বছরের আগস্টে এ হার ছিল ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মুদ্রাটির পতনের পেছনে বিশেষজ্ঞরা ইউরোজোনের ২০ দেশের বাইরে ইউরোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন।
বিনিময়মাধ্যম হিসেবে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার বৃদ্ধি নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে। আগস্টে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ হয়েছে ইউয়ানে, যা জুলাইয়ের তুলনায় বেশি। জুলাইয়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৬। ইউয়ানের প্রভাব বাড়ার অন্যতম কারণ ডলারের আধিপত্য কমাতে চীনের আঞ্চলিক ভূমিকা। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক বাণিজ্যে তাদের নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতি বিশ্লেষক স্টিফেন জেনের দাবি, ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ববাজারে ডলারের রিজার্ভ কমেছে ১১ শতাংশ। ডলার ও ইউরোর পতনে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণ করছে চীনের রেনমিনবি ও অন্যান্য মুদ্রা। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক সংগঠন ব্রিকস। নতুন সদস্যদের যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক জিডিপিতে ব্লকটির অংশ ২৬ থেকে ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অবদান ১৮ থেকে বেড়ে ২১ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। ব্রিকস নিজেও তাদের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট। ব্লকের সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের মুদ্রাকে অগ্রাধিকার দিতে চায় তারা। এ প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোয় জমা থাকা রাশিয়ার রিজার্ভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এর বাইরে সুইফট ব্যবহারে রুশ ব্যাংকের ওপর আন্তর্জাতিক কমিউনিটির নিষেধাজ্ঞা ডলারে লেনদেনের ওপর আরেকটি চপেটাঘাত। রাশিয়া চাইছে ডলারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে। তা বাস্তবায়নে দেশটি সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তেল ও গ্যাসের দাম রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধের জন্য ক্রেতা দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মস্কো। অনেক দেশ এ দাবি মেনে না নিলেও কেউ কেউ মস্কোর এমন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে।
সুইফটের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক লেনদেনের প্রতি ১০টির মধ্যে সাতটিই হয়েছে ইউরো কিংবা ডলারে। ভবিষ্যতে ডলারের আধিপত্যে অবশ্য নতুন ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে ডিজিটাল মুদ্রা বা সিবিডিসিকে। সিবিডিসি পরিচালনায় ডলারের প্রয়োজন নেই। এটি স্বর্ণ কিংবা পণ্যদ্রব্যের মতোই বিনিময়যোগ্য হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সিবিডিসির ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বাড়বে।
অর্থসংবাদ/এমআই