ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সম্প্রতি একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ইউরোর একটি ডিজিটাল ভার্সন চালু করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে ইউরো ব্যবহারকারী ২০টি দেশের নাগরিকরা নিরাপদে ও বিনামূল্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবে।
ইসিবি জানায়, তারা ১ নভেম্বর থেকে প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে দুই বছরের জন্য ডিজিটাল ইউরো চালু করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে তারা ডিজিটাল ইউরোসংক্রান্ত নিয়মগুলো চূড়ান্ত করবে। ইসিবি এক্ষেত্রে তাদের প্রাইভেট সেক্টরের অংশীরদারদের সঙ্গে এ পদক্ষেপে কাজ করবে এবং তারা কিছু পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাবে।
এছাড়া ইসিবি আরো জানায়, দুই বছর ডিজিটাল মুদ্রার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলার পর গভর্নিং কাউন্সিল পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেবে। অর্থাৎ এ পদক্ষেপটি ভবিষ্যতে আরো প্রসারিত করবে কিনা।
সম্প্রতি নেয়া সিদ্ধান্তটি তাদের বহু বছরের একটি প্রকল্পের ছোট পদক্ষেপ। যার মাধ্যমে ইসিবি অন্যান্য সাতটি ধনী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় এগিয়ে থাকবে এবং এটি অন্যদের জন্য অনুসরণীয়।
বেশ কয়েকটি ক্যারিবিয়ান দেশ ও নাইজেরিয়া এরই মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছে। এছাড়া চীন ও সুইডেনেও এ প্রকল্প চালু হয়েছে।
ডিজিটাল ইউরো অনেকটা অনলাইন ওয়ালেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো কাজ করবে, তবে মূল্য পার্থক্য থাকবে এটা ইসিবির অনুমোদিত হওয়ায় অন্যান্য প্রাইভেট ব্যাংকের তুলনায় নিরাপদ এবং এর মাধ্যমে বিনামূল্যে অর্থ প্রদান করা যাবে।
প্রকল্পটি নিয়ে সমালোচকদের কিছু নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে। প্রধানত ব্যাংকার ও নিয়ন্ত্রকরা আশঙ্কা করছেন এটি বাণিজ্যিক খাত থেকে আমানত কেড়ে নেবে। কিছু শিক্ষাবিদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গোপনীয়তা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ও বেশকিছু ভোক্তা গোষ্ঠীও এ আশঙ্কা করছেন।
রক্ষণশীল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জার্মান সদস্য মার্কুস ফেরবার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইসিবি ডিজিটাল ইউরোর অতিরিক্ত মূল্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি।’
ইসিবি বলেছে একটি ডিজিটাল ইউরো পেমেন্টের বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করবে, যেখানে এখন মার্কিন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর আধিপত্য রয়েছে।
ইসিবি জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সেই উদ্বেগ কমাতে, তারা একজন ব্যক্তি নিজের কাছে কী পরিমাণ ইউরো রাখতে পারবে তার একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সম্প্রতি জানায়, ডিজিটাল মুদ্রার সংকটকালীনের বাইরে আর্থিক নীতির ওপর একটি নমনীয় প্রভাব থাকা উচিত এবং তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে।
নগদ অর্থের মতোই ব্যবহারকারীরা আশপাশের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ইউরোয় অফলাইনে অল্প পরিমাণেও অর্থ লেনদেন করতে পারবে। ইসিবি আশ্বস্ত করেছে তারা পৃথক লেনদেন সম্পর্কে কোনো ডাটা সংরক্ষণ করবে না।
ডিজিটাল ইউরো ইসবির পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডিজিটাল ওয়ালেট প্রদানকারীরা বিতরণ করবে। এটি শুধু ইউরো এলাকার বাসিন্দাদের এবং বিদেশী নাগরিকদের জন্য এ সুবিধা দেয়া হবে। যার কারণে স্থানীয় মুদ্রা দুর্বল এমন দেশগুলোয় ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক অর্থ লেনদেন ২০১৭ সালে ১৮৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউরো থেকে ২০২১ সালে তা ২৪০ ট্রিলিয়ন ইউরোয় পৌঁছেছে।
অর্থসংবাদ/এসএম