ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্র্যাক ব্যাংকের দুই রিডিং ক্যাফের সদস্যরা সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় দুই কবি জীবনানন্দ দাশ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। পাঠকরা আলোচনা করেছেন জীবনানন্দের ১০০টি কবিতার সংকলন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে।
ঢাকায় রিডিং ক্যাফের সাহিত্য-অনুরাগী সদস্যরা জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সৃষ্টির গভীরে গিয়ে প্রকৃতি, ইতিহাস ও কল্পনাকে কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরায় তাঁর যে অসাধারণ দক্ষতা ছিল, তার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। রিডিং ক্যাফের সাহিত্যপ্রেমীরা সাহিত্যে জীবনানন্দের উপমা ব্যবহার, বর্তমান সময়েও তাঁর কর্মের প্রাসঙ্গিকতা এবং তাঁর দার্শনিক ভাবনা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। জীবনানন্দ দাশ আসলে কী ছিলেন— রোমান্টিক, অর্থহীনতায় বিশ্বাসী, নাকি অস্তিত্ববাদী কবি? – এ নিয়ে হয় প্রাণবন্ত আলোচনা। জীবনানন্দ দাশের কবিতার স্বতন্ত্র মাধুর্যতার ভূয়সী প্রশংসার মধ্য দিয়ে এবারের রিডিং ক্যাফের আলোচনা শেষ হয়।
‘শেষের কবিতা’ নিয়ে আলোচনায় চট্টগ্রাম রিডিং ক্যাফের সদস্যরা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমিত এবং লাবণ্যের চরিত্র নিয়ে নিজেদের চমৎকার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। কয়েকজন সদস্য লাবণ্য চরিত্রের জটিলতা উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইচ্ছাকৃতভাবে লাবণ্য চরিত্রটি অমিতের চেয়ে বহুমুখী করার উদ্দেশ্যে তৈরি করেছেন কি না, তা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এছাড়াও ক্যাফের সদস্যরা রবীন্দ্রনাথের শেষজীবনের সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে রোমান্টিক ধারায় শেষের কবিতার স্থান কোথায় হতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনা করেন।
ক্যাফের সদস্যরা উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজের প্রতিনিধিত্ব এবং রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক চিত্রিত সামাজিক কাঠামোর ওপর ইংরেজ ঔপনিবেশিকতার প্রভাব সন্ধানের চেষ্ঠা করেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকে আমরা বিশ্বাস করি যে, অনেকে মিলে বই পড়া এবং তা নিয়ে আলোচনা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র শেখা এবংগভীর চিন্তাভাবনার সংস্কৃতিই গড়ে তোলে না, বরং আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং বন্ধুত্বের বিকাশও ঘটায়। সাহিত্য মানুষের মনে জীবনমুখী বিভিন্ন চিন্তাভাবনা সৃষ্টি এবং জ্ঞানের দরজা খুলে দেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
এই উদ্যোগটির জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন জেলায় অন্যান্য সহকর্মীরাও নিজেদের পাঠচক্রের যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। পাঠচক্রেরর এমন বিকাশ মূলত মানুষের ব্যক্তিগত বিকাশ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরির মাধ্যমে সমাজে শেখার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টিপূর্বক একটি বুদ্ধিদ্বীপ্ত সমাজ গঠনে অবদান রেখে চলে।