মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রতি যুগেই নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তারা সবাই মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছেন। হজরত আদম, নূহ, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়া সাল্লাম প্রত্যেকেই তার উম্মতকে তাগুত ও শির্ক থেকে সাবধান করে গেছেন। তারা মানুষকেকে আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাসক পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাদের কেউই নিজেকে বা অপর কোনো সৃষ্টিকে ইলাহ বলে ঘোষণা দেননি। সবাই মানুষকে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর শেখানো পথে চলতে এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। যে বিশ্বাস, কর্ম বা আচরণ মানুষের অকল্যাণ করে বা আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
সব নবী-রাসূলের মূল দাওয়াত বা আহ্বান ছিল এক, সবাই মানুষকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী হওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন, তবে তাদের শরীয়াত বা বিধানাবলী ছিল যুগ ও সমাজ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। আল্লাহর পথে নবীদের আহ্বানের এই অভিন্নতা নিয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَ مَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ ۚ فَمَنۡ اٰمَنَ وَ اَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۴۸﴾و ما نرسل المرسلین الا مبشرین و منذرین ۚ فمن امن و
اصلح فلا خوف علیهم و لا هم یحزنون
আর আমি রাসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করি। অতএব যারা ঈমান এনেছে ও শুধরে নিয়েছে, তাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। ( সূরা আনআম, (৬), আয়াত, ৪৮)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۲۵﴾و ما ارسلنا من قبلک من رسول الا نوحی الیه انهٗ لا اله الا انا فاعبدون
আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর।’ (সূরা আম্বিয়া, (২১) আয়াত, ২৫)
অপর এক আয়াতে নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আলাইহিহুম সালামের নবুয়ওতের সঙ্গে অন্য নবীদের তাওহীদের বাণী যে একই, সে কথা উল্লেখ করে বর্ণিত হয়েছে,
شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِهٖ نُوۡحًا وَّ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ مَا وَصَّیۡنَا بِهٖۤ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡهِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَیۡهِ ؕ اَللّٰهُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یُّنِیۡبُ
তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই বিধি-ব্যবস্থাই দিয়েছেন যার হুকুম তিনি দিয়েছিলেন নূহকে। আর সেই (বিধি ব্যবস্থাই) তোমাকে ওয়াহীর মাধ্যমে দিলাম যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে- তা এই যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর, আর তাতে বিভক্তি সৃষ্টি করো না, ব্যাপারটি মুশরিকদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান জানাচ্ছ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তার পথে বেছে নেন, আর তিনি তার পথে পরিচালিত করেন তাকে, যে তার অভিমুখী হয়। (সূরা শুরা (৪২), আয়াত ১৩)
প্রত্যেক জাতির নবীদের আহ্বান একি, জানিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,
وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ هَدَی اللّٰهُ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡهِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ
প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, আল্লাহর ইবাদাত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের উপর অবধারিত হয়েছে গুমরাহী, অতএব যমীনে ভ্রমণ করে দেখ, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল! (সূরা নাহল, (১৬), আয়াত, ৩৬)