হালুয়া-রুটি শবে বরাতে বিতরণ করা কি নিষেধ?

হালুয়া-রুটি শবে বরাতে বিতরণ করা কি নিষেধ?

লাইলাতুল বরাত বা ‘শবে বরাত’ হচ্ছে ‘সৌভাগ্যের রাত’। মুসলমানরা রাতটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ইবাদত করে থাকেন। তবে বাংলাদেশে শবে বরাত পালনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে হালুয়া-রুটির সংস্কৃতি। এ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও বাংলাদেশে প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে, বাড়িতে হালুয়া-রুটি বানানো এবং তা প্রতিবেশীর মাঝে বিতরণ করা।


বিবিসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৯শ শতকের শেষের দিকে। তখন ঢাকার নবাবরা বেশ আয়োজন করে শবে বরাত পালন করতেন। সে সময়ে ঢাকার নবাবরা শবে বরাতের সময় আলোকসজ্জা করতেন। পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করতেন।


ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময়ে মূলত মিষ্টির দোকান খুব একটা ছিল না। ফলে মিষ্টি জাতীয় খাবার বানানোর উপাদান দিয়ে বাড়িতে বসেই হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়। আস্তে আস্তে এর বিস্তার ঘটতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।


অনেকের মতে, শবে বরাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাছাড়া শবে বরাত নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাওয়া-দাওয়া। তাই শবে বরাতে হালুয়া-রুটি তৈরি বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। এ ছাড়া খাবারে মাছ কিংবা মাংস থাকাকে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।


বিবিসিকে দেওয়া এক বক্তব্যে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, সে সময়ে হিন্দুদের আধিপত্য থাকার কারণে সেটিকে মোকাবেলা করার জন্য ঢাকার নবাবরা শবে বরাতে অনেক বড় আয়োজন করতেন। এতে ঢাকার নবাবদের মুসলমান পরিচয় এবং আধিপত্য- এ দুটো বিষয় একসাথে তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যেত।


তিনি বলেন, নবাবরা যেহেতু মুসলিম ছিলেন এবং ঢাকাকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেজন্য উৎসবগুলোকে তারা গুরুত্ব দিতেন। এর মাধ্যমে নবাবদের আধিপত্য, মুসলমানদের আধিপত্য এবং ধর্ম পালন- এ তিনটি বিষয় একসাথে প্রকাশ হতো। ১৯শ শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শবে বরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।


তিনি আরও বলেন, সেই ধারাবাহিকতায় শবে বরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর সাথে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। একটা সময় ছিলো যখন ঢাকায় শবে বরাত পালনের বিষয়টি ছিল সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে।


আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টিকুলের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)


এ রাতটিই আমাদের দেশে ‘শবে বরাত’ হিসেবে পরিচিত। এ রাতে আমাদের কর্তব্য বেশি বেশি নেক আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা; যেন আল্লাহর রহমত ও ক্ষমায় আমরাও শামিল হতে পারি।


সদকা ও হাদিয়া সব সময়ই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন বা দরিদ্রদের হালুয়া-রুটিসহ যে কোনো খাবার খাওয়ানো, হাদিয়া পাঠানো নাজায়েজ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণকে শবে বরাতের জরুরি বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল মনে করলে তা বিদআত গণ্য হবে। হালুয়া রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণ করা শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমল নয়। শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে না করলে বা এ রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণ করা নাজায়েজ নয়।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

যানবাহনে চলাচলের তাসবিহ ও দোয়া পড়ার নিয়ম
জুমার জন্য যে ৪ কাজ জরুরি
সৌদির নতুন গ্র্যান্ড মুফতি ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ
চাঁদ দেখা গেছে, রবিউস সানি মাস শুরু বুধবার
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনে বর্ণাঢ্য জাতীয় কর্মসূচি
মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা কি মাকরুহ?
জুমার দিনের ১০ আমল
হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর
জোহর-আসর নামাজের কেরাত আস্তে পড়তে হয় কেন?