রহমতের দশক শেষে শুরু হলো রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমার দশক। রমজানের পুরো সময়কে আল্লাহ তায়ালা তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
এর প্রথম ভাগে রহমত নাজিল হয়, মধ্যভাগে মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে নাজাত। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত-
তিনি বলেন, রাসূল সা. শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের মাঝে খতিব হিসেবে দাঁড়ালেন, বললেন (মাহে রমজান) এমন একটি মাস যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যবর্তী ভাগ মাগফেরাত বা ক্ষমা আর শেষ ভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অর্থাৎ রমজান মাসের ৩০ দিনের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)
গুনাহ বা পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এমন কাজে লিপ্ত হয়। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহের উপর বছরের পর বছর অটল থাকা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা না করা।
অনেকেই শয়তানের কুপ্ররোচনায় গুনাহ করে ফেলেন এবং গোনাহ থেকে মাগফিরাত লাভের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। তাদের জন্য মাগফিরাত লাভের বিশেষ সুযোগ আজ থেকে। আল্লাহ রমজানের দ্বিতীয় দশকে বান্দাদেরকে বেশি বেশি ক্ষমা করেন।
রমজানে মুসলিম বান্দাগণ অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা. এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফিরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৬৪৬)
মাগফিরাতের দশক শেষেই শুরু হবে নাজাতের দশক। শেষ দশকের বিশেষ আমল ইতিকাফ। মাগফিরাতের দিনগুলো শেষ হওয়ার আগেই রোজাদারেরা মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।
রমজানে জুমার ফজিলত: পবিত্র মাহে রমজান অফুরন্ত ফজিলতের মাস। রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজান মাসে জুমাবার মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
ইসলামের দৃষ্টিতে দিনটি অনেক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ এ দিনকে অন্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পবিত্র রমজানের জুমার দিন হওয়ায় এর ফজিলত আরও অনেক বেশি।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এ দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’ (সুরা জুমুআ: ০৯)
হাদিসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইউসুফ (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মত গোসল করে সালাতের জন্য আগমণ করে, সে যেন একটি উট কুরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমণ করে, সে যেন একটি গাভী কুরবানি করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমণ করে, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানি করল।
চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমণ করে সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমণ করল, সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।
ইসলামি শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এ দিন মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদমের (আ.) দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে।
জুমার দিনকে আল্লাহতায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন।
হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, এ বরকতময় দিনটি আল্লাহতায়ালা বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদিকে (সা.) দান করেছেন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন।
এ পবিত্র দিনে হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ)
এ ছাড়া হাদিস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমা তোমাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাত ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এ দিনটি রোজার জন্য নির্ধারিত করা সমীচীন নয়। জুমার আগের রাত্রিটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পূর্ববর্তী রাতে বনি আদমের সব আমল মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। (বুখারি, আহমদ)
তাই জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত দিনটিকে কাজে লাগানো। দিনটিতে মহান আল্লাহর ইবাদত করা এবং প্রার্থনায় নিজের ও সমগ্র মানবতার জন্য কল্যাণ-সৌভাগ্য ও উন্নতির দোয়া করা উচিত। আল্লাহ সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                