যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার শুরু হওয়া শেষ দফার প্রচারণায় রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প সেসব রাজ্যে সমাবেশ করবেন, যেগুলোর ফলের ওপর নির্ভর করছে তিনি আরো চার বছর হোয়াইট হাউজে থাকতে পারবেন নাকি পারবেন না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্পের অদক্ষতাকে প্রচারণার মূল হাতিয়ার বানানো জো বাইডেনের গতকাল পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এ রাজ্যের ২০টি ইলেক্টোরাল ভোট এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
শেষ দুদিনের প্রচারণায় ট্রাম্পের মোট ১০টি সমাবেশে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এর অর্থ প্রতিদিন তাকে পাঁচটি করে সমাবেশে অংশ নিতে হবে। ক্ষমতাসীন এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য, প্রচারণায় সাড়া ফেলে নির্বাচনের দিন আগামীকাল নিজের পক্ষে বিপুল জনরায় নিয়ে আসা। গতকাল ট্রাম্প মিশিগান, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডার সমাবেশে অংশ নেবেন। আজ তার প্রচারণা সূচিতে রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে একটি এবং মিশিগানে দুটি সমাবেশ। মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে রাতের সমাবেশের মধ্য দিয়ে ৭৪ বছর বয়সী এ প্রার্থীর প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। একই জায়গায় ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণাও শেষ করেছিলেন ট্রাম্প।
চার বছর আগের ওই নির্বাচনে রিপাবলিকান এ প্রার্থী মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের মতো কয়েক দশক ধরে ডেমোক্র্যাটদের স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোয় জিতে প্রতিপক্ষ শিবিরকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে। শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের বিপদের মাত্রাকে খাটো করে দেখেছেন ট্রাম্প। তিনি প্রতিপক্ষ বাইডেনের সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি লকডাউন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে, যার ধকল সামলানোর ক্ষমতা দেশের নেই।
জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোয় রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও সুইং স্টেটগুলোয় দুজনের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম।
হোয়াইট হাউজের দখল ধরে রাখতে হলে ট্রাম্পকে এবারো ২০১৬ সালের মতো ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, আইওয়া ও অ্যারিজোনায় সামান্য ব্যবধানে হলেও জয়ী হতে হবে এবং পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনের মতো মধ্য পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অন্তত একটি ধরে রাখতে হবে।
তবে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগেই যে বিপুল পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে, তাতে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক রিপাবলিকানই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আগাম ভোটে প্রেসিডেন্ট তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছেন বলেও ধারণা তাদের।
অবশ্য ট্রাম্প ও তার প্রচার শিবিরের লোকজন এভাবে ভাবতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, জনমত জরিপগুলোয় রিপাবলিকান সমর্থকদের বড় একটি অংশের কথা উঠেই আসেনি। ভোটের দিন বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি অন্যদের শঙ্কা কাটিয়ে দেবে বলেও প্রত্যাশা রিপাবলিকান শিবিরের।
আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবার ভোটের ফল দ্রুত মিলবে না বলে শনিবার সমর্থকদের ফের সতর্ক করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, পেনসিলভানিয়ার মতো বড় রাজ্যগুলোর ‘মেইল-ইন’ ভোট গুনতে সময় লাগায় আগামীকাল রাতেই ভোটের ফলাফল নাও জানা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরই মধ্যে রেকর্ড ৯ কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউএস ইলেকশনস প্রজেক্ট। ভোটের নির্ধারিত দিনের আগেই শনিবার পর্যন্ত এ বিপুলসংখ্যক মানুষের রায় দেয়া হয়ে গেছে। এতে দেশটিতে এক শতকের বেশি সময়ের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ার মঞ্চ প্রস্তুত হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের দ্বৈরথ নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের যে তুমুল আগ্রহ, এবারের আগাম ভোটের সংখ্যাই তার প্রমাণ বলে ধারণা গণমাধ্যমের। শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে, তা ২০১৬ সালের নির্বাচনে মোট ভোটের প্রায় ৬৫ শতাংশ। রয়টার্স, বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্ট