বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বেড়ে যাওয়ায় এ দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ মাঝে কিছুটা কমলেও সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় আবারো অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে। রোববার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৬৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে গত ১৯ অক্টোবর ওপেক প্লাস জোটের দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জ্বালানি তেলের বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়। এখন পর্যন্ত ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত, ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৭৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করা হবে, যা জানুয়ারি থেকে কমানো হবে ৫৮ লাখ ব্যারেল।
অবশ্য সম্প্রতি ওপেক প্লাস জোটের তিনটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বাধ্য করলে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকা এবং জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে ওপেক প্লাস জোটের তথ্য প্রকাশের পর গত সপ্তাহেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বড় পতনের মুখে পড়ে। দফায় দফায় কমে গত সপ্তাহে তেলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়।
গত সপ্তাহে শুরু হওয়া দরপতনের ধারা চলতি সপ্তাহের শুরুতেও দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে (সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে) প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১ দশমিক ৩৬ ডলার কমে ৩৪ দশমিক ৪৭ ডলারে নেমে গেছে।
এতে আজ অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর মাসের মধ্যে কমেছে ১২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৪৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ দাম কমেছে।
এর আগে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের কারণে গত ২০ এপ্রিল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরেই অবশ্যই তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে এখন আবার বড় পতনের মুখে পড়েছে বিশ্ব তেলের বাজার।
অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি বড় দরপতন হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের। ইতোমধ্যে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দশমিক ৭৩ বলার বা ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ৩৬ দশমিক ৭৩ ডলারে নেমে গেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ দাম কমেছে। আর বছরের ব্যবধানে কমেছে ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের বিষয়ে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারবিষয়ক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ভান্দানা ইনসাইটের জ্বালানি বিশ্লেষক ভান্দানা হরি মনে করেন, জ্বালানি তেলের বাজার আবারো ক্রমান্বয়ে বিষণ্নতায় ঢেকে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, জ্বালানি পণ্যটির চাহিদার চিত্র এরইমধ্যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির এ বিশ্লেষক বলেন, ‘জ্বালানি তেলের চাহিদা এরইমধ্যে কমে গেছে। বিশেষ করে সৌদি আরব ও রাশিয়া আগামী জানুয়ারিতে ওপেক প্লাস জোটের উত্তোলন বাড়ানোর যে পরিকল্পনার বিষয়টি জানিয়েছে, সেটি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।’