ইসলামে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহার দিনের চেয়েও জুমার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
إِنّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الْأَيّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ مِنْ يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ
জুমার দিন দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে মহান দিন। এমন কি এ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান। (সুনানে ইবনে মাজা)
জুমার দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করে মসজিদে গিয়ে উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায়ের অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ، ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ، فَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الإِمَامُ أَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى
যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
এ হাদিসে জুমার সওয়াব লাভের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেমন কিছু করণীয় কাজের কথা বলেছেন, দুটি বর্জনীয় কাজের কথাও বলেছেন যা থেকে বিরত থাকা জুমার সওয়াব লাভের শর্ত: ১. মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া ২. খুতবার সময় কথা বলা
এ হাদিসটিসহ বিভিন্ন হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে এ দুটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন
মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া
জুমার দিন ইমামের কাছাকাছি বসার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা উচিত। কিন্তু সেজন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে। মসজিদে পরে উপস্থিত হয়ে অন্য মুসল্লিদের ডিঙিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা অন্যায় ও গুনাহের কাজ।
খুতবা চলা অবস্থায় কেউ যদি কাতার ডিঙিয়ে সামনে যেতে চায়, তাহলে অন্য মুসল্লিদের উচিত তাকে এ কাজ করতে নিষেধ করা ও বসিয়ে দেওয়া। খতিব সাহেবের চোখে পড়লে তিনি নিজেই তাকে বসে যাওয়ার নির্দেষ দিতে পারেন। একবার রাসুল সা. জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। তার চোখে পড়লো এক ব্যক্তি মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বললেন,
اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ وَآنَيْتَ
বসে পড়, তুমি দেরি করে এসেছ, মানুষকে কষ্টও দিচ্ছ। (সুনান আবু দাউদ)
জুমার খুতবার সময় কথা বলা
জুমার খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবার সময় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
إذا قلت لصاحبك ’أنصت‘ يوم الجمعة والإمام يخطب فقد لغوت
জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। (সহিহ বুখারি)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
مَن تكلَّم يوم الجمعة والإمام يخطب فهو كمثل الحمار يحمل أسفارً
যে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কথা বলে সে কিতাবের বোঝা বহনকারী গাধার মতো। (মুসনাদে আহমদ)
ফকিহরা বলেন, যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়।
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                