এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্সে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৬ শতাংশ বেড়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে এটাই খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক মূল্যসূচক।
২০২০ সালের শুরুটাও বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। মহামারী জোরালো হলে পরের মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে। মার্চ ও এপ্রিলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক আরো কমে যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ১ পয়েন্ট ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্টে নেমে আসে। মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে, যা বিগত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
টানা পতন কাটিয়ে জুনে ঘুরে দাঁড়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্ট। এর পর থেকে সূচকমানে আর মন্দা ভাব দেখা যায়নি। জুলাইয়ে এ সূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ দশমিক ২ পয়েন্টে। আগস্টে তা আরো বেড়ে ৯৬ দশমিক ১ পয়েন্টে উন্নীত হয়। আর সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে। টানা পাঁচ মাসের চাঙ্গা ভাবের ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে তা চলতি বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।
গত অক্টোবরে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেল, খাদ্যশস্য, চিনি ও দুগ্ধপণ্যের দাম বাড়তির দিকে থাকলেও আমিষ পণ্যের দাম আগের তুলনায় সামান্য কমে এসেছে। এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্সে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১০৬ দশমিক ৪ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। বিগত নয় মাসের মধ্যে অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ভোজ্যতেল। করোনা মহামারীর দীর্ঘসূত্রতায় পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের উৎপাদন নিয়ে সংকটে পড়েছে শীর্ষ উৎপাদনকারীরা। চাহিদা কমে আসার আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে দুই ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়তির পথে রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১১১ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও, যা আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে টানা চার মাস ধরে শস্যের দাম বাড়তির পথে রয়েছে।
করোনাকালে বিশ্বজুড়ে শস্যের চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে। চীনও ভুট্টা, গম, চালসহ বিভিন্ন শস্যের আমদানি বাড়িয়েছে। অনেক দেশ সংকটকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি শস্য মজুদ করছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গমসহ বিভিন্ন শস্যের দাম বেড়েছে। ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ভুট্টা। এর ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব পড়েছে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকে।
অক্টোবরে দাম বেড়েছে দুগ্ধপণ্যের। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১০৪ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত অক্টোবরে বিশ্ববাজারে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে দুগ্ধপণ্য। এর মধ্য দিয়ে টানা পাঁচ মাস ধরে দুগ্ধপণ্যের দামে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে চিনির দামেও। চলতি বছরের অক্টোবরে চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও, যা আগের মাসের তুলনায় ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
তবে গত অক্টোবরে আমিষ পণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৯০ দশমিক ৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে আমিষ পণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১০ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির পর থেকে আমিষ পণ্যের এ সূচকমান টানা কমতির দিকে রয়েছে।সূত্র এএফপি ও রয়টার্স।