প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতি বাতিল হলে প্রবাসী কর্মীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী কফিল (নিয়োগকর্তা) পরিবর্তন ও দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। কর্মসংস্থান চুক্তিতে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী চলাচলের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। এছাড়া এতে নিয়োগকর্তার নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ তৈরি হবে তাদের। পাশাপাশি আবাসিক ভিসাপ্রাপ্তি ও স্বজনদের ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাবেন তারা।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাফালা পদ্ধতি বাতিল হলে নারী কর্মীদের জন্য সুখবর হবে। তাদের ওপর নির্যাতন কমে আসবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসলও হবে এটি। কুয়েত, কাতার এটি বাতিল করেছে। এখন সৌদি আরব যদি বাতিল করে, তাহলে সেটি অবশ্যই আনন্দের খবর হবে।
এ বিষয়ে রামরুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকী জানান, কাফালা পদ্ধতি বাতিল হলে কারো কাছে আর দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে হবে না নারীদের।
প্রসঙ্গত, কোনো এক ব্যক্তির অধীনে বিদেশী শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়াই হলো কাফালা পদ্ধতি। যেখানে একজন কফিল কোনো বিদেশী কর্মীকে স্পন্সর করলে সে কর্মী সৌদি আরবে যেতে পারেন এবং সেখানে যাওয়ার পর ওই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় তাকে। এক্ষেত্রে ওই কর্মীর কাজ পরিবর্তনসহ সার্বিক সব বিষয় নির্ভর করে নিয়োগকর্তার ওপর।
বর্তমানে কাফালা পদ্ধতির আওতায় সৌদিতে কাজ করছেন ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী কর্মী। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পদ্ধতির আওতায় ৪১ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী গেছেন সৌদিতে।
সৌদি আরবে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশী কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এ পদ্ধতি বাতিল হলে তারা স্বাধীনভাবে চলতে পারবেন, যদি বিভিন্ন খাতে কাজের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়। একই সঙ্গে তারা সেখানকার শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতাও করতে পারবেন।
শ্রমিকরা জানান, কাফালা পদ্ধতিতে মালিকপক্ষ বহু সময় কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালায়। এ নির্যাতনের ফলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। আবার আইনের মারপ্যাঁচে নির্যাতনকারী নিয়োগকর্তারাও পার পেয়ে যান।
দেশটিতে কর্মরত নারীরা মালিকপক্ষের হাতে নির্যাতিত হলেও কাজ ছাড়তে পারেন না শুধু কাফালা পদ্ধতির কারণে। কারণ সে দেশের আইন অনুযায়ী কর্মস্থল ছাড়তে হলে বা দেশে ফিরতে হলে মালিকপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। মালিকপক্ষ অনুমতি না দিলে বা নিয়োগকালে দেয়া অর্থ পরিশোধ না করলে বিদেশী কর্মীদের দেশে আসার কোনো সুযোগ নেই।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, বিদেশী কোনো কর্মীকে দেশটিকে নিতে হলে মালিকপক্ষকে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ইকামা ফি, থাকা-খাওয়াসহ তার স্বাস্থ্য বীমা পরিশোধ করতে হয়। এসব করতে গিয়ে প্রতি বছর একজন কর্মীর পেছনে সংশ্লিষ্ট মালিকের ১৬ হাজার রিয়াল (প্রায় ৪ লাখ টাকা) খরচ হয়।
তবে কাফালা বাতিল হলে এর ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে বলে মনে করছেন সৌদিতে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, কাফালা পদ্ধতি বাতিল হলে শ্রমিকরা এক প্রকার স্বাধীন হয়ে যাবেন। তারা ইচ্ছামতো চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারবেন। এতে সংকট তৈরি হবে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বেন।