আজ বৃহস্পতিবার স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফান্সিসকো ডি এসিস বেনিতেজ এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিনডে পৃথকভাবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগের ওই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেনের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি। আমরা সেখানে অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ সৃষ্টি করেছি। কাজেই স্পেন সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে। তৈরি পোশাক ছাড়াও পাট, চামড়া এবং ঔষধ শিল্পে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ শক্তিশালী পর্যায়ে উঠে এসেছে। স্পেন এসব খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে।
তিনি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে স্পেনীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দেয়া কর অবকাশ সুবিধা এবং আকর্ষণীয় বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব প্যাকেজ গ্রহণ করতে পারবেন। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার এবং আঞ্চলিক বাজারের সুবিধাও নিতে পারবেন।
বাংলাদেশের শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’-এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পেন চাইলে বাংলাদেশের নৌপরিবহন খাতেও বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং স্পেনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বে নেতৃস্থানীয় ভূমিকারও প্রশংসা করেন। স্পেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, স্পেন বাংলাদেশের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রেল খাতের সম্প্রসারণে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী। স্পেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে চতুর্থ বড় গন্তব্যস্থল।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বাংলাদেশ এবং সুইডেনের কূটনৈতিক সম্পর্ককে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুইডেন ১৯৭১ সাল থেকেই বাংলাদেশকে ঋণ সুবিধা প্রদান করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী গত ১২ বছরে দেশের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে- সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি, যেটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পেয়েছে, যদিও তার সরকার পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে আদেশ বাতিলের কারণে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এমন দুঃসময়েও কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল না করায় সুইডেনকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ তার জনগণের জন্য ইতোমধ্যে কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন সংগ্রহে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিনডে বলেন, সুইডেন অনেকগুলো সবুজ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করেছে এবং বাংলাদেশকে সেগুলো ব্যবহারেও তিনি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সুইডেন জেন্ডার সহিংসতা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়। রাষ্ট্রদূত নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী নবনিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে স্বাগত জানান এবং তাকে দায়িত্ব পালনকালে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস