বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে
কোভিড-১৯ শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে খাবারের দাম তুলনামূলক অনেক কম ছিল। দিন দিন সময় যত গড়িয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় টানা ছয় মাস ধরে খাবার কেনায় বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফুড প্রাইস ইনডেক্স বলেছেন, টানা ছয় মাসের ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে। এ সময় ভোজ্যতেল, খাদ্যশস্য, চিনি, আমিষ ও দুগ্ধপণ্য—সব ধরনের খাবারের দাম বাড়তির দিকে ছিল। এএফপি ও রয়টার্স সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

২০২০ সালের শুরুটাও বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। মহামারী জোরালো হলে পরের মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে। মার্চ ও এপ্রিলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক আরো কমে যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ১ পয়েন্ট ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্টে নেমে আসে। মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়ায় ৯১ পয়েন্টে, যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্স বলেছে, চলতি বছরের নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১০৫ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে এটাই খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক মূল্যসূচক। একই সঙ্গে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই এ সূচকের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

টানা পতন কাটিয়ে জুনে ঘুরে দাঁড়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্ট। এর পর থেকে সূচকমানে আর মন্দা ভাব দেখা যায়নি। জুলাইয়ে এ সূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ দশমিক ২ পয়েন্টে। আগস্টে তা আরো বেড়ে ৯৬ দশমিক ১ পয়েন্টে উন্নীত হয়। আর সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে। টানা চাঙ্গা ভাবের ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো বেড়ে প্রায় ছয় বছরের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে।

গত নভেম্বরে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১১৪ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। শুধু আগের মাসের তুলনায় নয়, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে টানা পাঁচ মাস ধরে শস্যের দাম বাড়তির পথে রয়েছে।

করোনাকালে বিশ্বজুড়ে শস্যের চাহিদা বাড়তির দিকে। চীনও ভুট্টা, গম, চালসহ বিভিন্ন শস্যের আমদানি বাড়িয়েছে। অনেক দেশ সংকটকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি শস্য মজুদ করছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গমসহ বিভিন্ন শস্যের দাম বেড়েছে। ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ভুট্টা। এর ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব পড়েছে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকে।

নভেম্বরে বাড়তির পথে ছিল দুগ্ধপণ্যের দাম। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বরে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১০৫ দশমিক ৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বা দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে গত ১৮ মাসের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে দুগ্ধপণ্যের গড় দাম। টানা ছয় মাস ধরে বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের দামে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে।

একই চিত্র দেখা যায় চিনির দামেও। চলতি বছরের নভেম্বরে চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৮৭ দশমিক ৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। টানা দুই মাস ধরে চিনির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।

অর্থসংবাদ/এসএ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি