সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ পিয়ের ভার্মেরেন বলেন, উত্তর আফ্রিকাজুড়ে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এরদোগানের ‘নব্য অটোমান ও প্যান-ইসলামিক’ বৈদেশিক নীতি কৌশলের ফলস্বরূপ। এটি শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময়। তবে ২০২০ সালে এসে তুর্কি প্রভাব আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরই জেরে লিবিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং তুর্কি সৈন্য ও ভাড়াটে দলকে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া সীমান্তে নিয়োগ করেছে।
আঙ্কারাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি বাকের বলেন, আফ্রিকা কৌশলের মাধ্যমে তুরস্ক মাগরেব অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চাইছে। তুর্কি-আলজেরীয় সম্পর্ক দ্রুত উত্থিত হচ্ছে। তুরস্ক ও লিবিয়ার পারস্পরিক স্বার্থ দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। আবার তিউনিসিয়া ও মরক্কোর কথা উঠলে তুরস্ক পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছে।
তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় তুরস্কের প্রভাব সবচেয়ে বেশি নাটকীয় হয়েছে। এটি ২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহের পতনের পরে দেশটিকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল এবং এটি দীর্ঘকালীন স্বৈরশাসক মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল।
এছাড়া লিবিয়ার পশ্চিমা দেশগুলোয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে তুরস্ক প্রভাব বিস্তার করছে। চলতি বছরের শুরুতে এরদোগানের সফর করার পর আলজেরিয়ায় কভিড-১৯ চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তা দেয়া হয়। এরই মধ্যে দেশটিতে তুরস্কের ১ হাজার ২০০-এর অধিক সংস্থা দোকান উন্মুক্ত করেছে। অন্যদিকে তুরস্ক আলজেরিয়ান পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এছাড়া দেশ দুটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এক বছরে ৫০০ কোটি ডলার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাগরেব অঞ্চলে তুর্কি পণ্যের আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘মেড ইন তুরস্ক’ পণ্যের ভিড়ে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে রয়েছে। স্থানীয় একজন প্রস্তুতকারক বলেন, তুর্কিরা টেক্সটাইলের বাজারকে প্লাবিত করেছে এবং অনেক মরক্কোর ব্র্যান্ডকে হত্যা করেছে। এ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গত অক্টোবরে ২০০৬ সালের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সংশোধন করা হয়েছে। একই অবস্থা তিউনিসিয়ায়ও। ২০০৪ সালে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর স্বল্প মূল্যের তুর্কি পণ্যগুলো তিউনিসিয়ার ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে ২০১৮ সালে তারা কিছু তুর্কি পণ্যে শুল্ক আরোপ করে। যদিও এক্ষেত্রে আঙ্কারার প্রভাবে এগুলো স্পর্শ করেনি।
তুরস্কের পরাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত অঞ্চলটিতে তুর্কি প্রভাব বৃদ্ধির আরো কিছু কারণ রয়েছে। এক্ষেত্রে মহামারীও সহায়তা করেছে। সংকটের এ সময়ে বিভিন্ন তুর্কি সহায়তা এরদোগানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। উত্তর আফ্রিকার বিশাল যুবা জনগোষ্ঠীর মধ্যে মহামারীতে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করে এরদোগান ব্যাপক সম্মান অর্জন করেছেন।