সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহের শেয়ার পুঁজিবাজারে হস্তান্তর (অফ লোড) কার্যক্রম তদারকির জন্য এই কমিটি গঠন করা হলো।’
এই কমিটির তিনটি কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার লক্ষ্যে গৃহীত সব কার্যক্রমের নিবিড় তদারকি। গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি পাক্ষিক পর্যালোচনা এবং অর্থমন্ত্রীকে নিয়মিত অবহিতকরণ।
কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি (মহাপরিচালক পদমর্যাদা), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন মনোনীত সদস্য, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা), বিদ্যুৎ বিভাগের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব (ঋণ ব্যবস্থাপনা)।
সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডের জন্য একটি কোম্পানিকে পরপর দুই বছর মুনাফা অর্জন করতে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ১৫টি কোম্পানি লাভজনক করার লক্ষে কোম্পানিগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ পুনর্গঠন, লাভজনক না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে দেশী-বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ এবং সে মোতাবেক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।
সরকারি ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ৯টি, বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দু’টি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ও বিটিসিএল।
চলতি মাসের ২ তারিখে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে শিগগিরই পুঁজিবাজারে সাতটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসা হবে। এর পাশাপাশি আরও সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আনা হবে। এই কোম্পানিগুলো হলো- তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই কোম্পানিগুলোকে টেকসই করতে হবে। প্রথমে প্রতিটি কোম্পানির ব্যালান্সশিট আমাদের অ্যাসেস করতে হবে। এখন থেকে ১০ বছর আগের অ্যাসেটের দাম আর এখনকার দাম এক নয়। এখন কারেন্ট প্রাইসে এগুলো আমাদের রিভ্যালু করতে হবে। আমাদের সম্পদের পরিমাণ রিভ্যালু করতে হবে। রিভ্যালু করতে যে সময় লাগবে সেই সময় কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে। সম্পদের পরিমাণ রিভ্যালু করতে দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, আশা করছি আমরা দুই মাস সময়ের মধ্যে সাতটি কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ অ্যাসেস করতে পারব। যেটা নেট অ্যাসেস দাঁড়াবে সেটার ভিত্তিতেই শেয়ারগুলো ভ্যালুয়েশন হবে। এরপরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ধীরে ধীরে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা হবে। দুই মাসের মধ্যেই এগুলো অ্যাসেসমেন্ট করেই আমাদের তথ্য দেবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের প্রতিষ্ঠান দিয়েই সম্পদের অ্যাসেস করবে। বাইরের বিভিন্ন অডিট ফার্ম দিয়েই তারা সম্পদের অ্যাসেস করবে। সুতরাং তাদেরও সময় লাগবে। সবার সমর্থন নিয়েই তারা তাদের কাজটি করবে।
সাতটি কোম্পানি প্রাইভেট সেক্টর থেকে কাজ করতে পারে আবার আইসিবি (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) থেকেও করতে পারে। আমরা তাড়াতাড়ি সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে নিয়ে আনতে চাই। এ জন্য একটি নয়, আমরা সাতটি ফার্মকে দিয়ে সম্পদের মূল্যায়ন করব; যাতে কাজটি তাড়াতাড়ি করা যায়। এই বাস্তবতায় সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে এই তদারকি কমিটি গঠন করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোডের প্রক্রিয়া প্রায় ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে। ২০০৯ সালে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয় সরকার। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২১টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে বলা হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আগের পাঁচটি কোম্পানিকে আরও শেয়ার বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তার পর সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প থেকে বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করা হলেও এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অন্য দিকে গত ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আটটি সরকারি কোম্পানির নির্ধারিত পরিমাণ শেয়ার অফলোড কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।