রাজধানীর কিছু নামিদামি স্কুল এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাসও অনলাইনে নেওয়া শুরু করেছে। কবে নাগাদ বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত না হলেও আসছে মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে এই ছুটি আরো অন্তত দু’দফা বাড়িয়েতে মার্চ পর্যন্ত করা হতে পারে।এজন্য মার্চ থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস ম্যাপিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি)। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মহামারি করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তর পর্যন্ত অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ১০ মাস ধরে আনুষ্ঠানিক ক্লাসরুম পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এতে শিক্ষার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারসহ শিক্ষাবিদরা মনে করছেন। ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে স্কুল ও কলেজপড়ূয়া সব শিক্ষার্থীকে ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছে। যদিও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রেণির পাঠে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। আপাতত আমাদের ভাবনা, মার্চ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস পুরোপুরি শুরু করা। অন্য ক্লাসও ধাপে ধাপে শুরু হবে। তবে এটি সরকারের ভাবনা, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।’ এ বিষয়টি করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ভ্যাকসিন আসার পর সরকার করোনার টিকাদান শুরুর অপেক্ষা করছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ কার্যক্রম শুরু হলে মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলবে। প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি এবং পরে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান শুরু হবে। এরপর অন্যান্য শ্রেণিতেও পাঠদানও শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া যে শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ জনের বেশি, সেখানে দুইভাগে ক্লাস নেওয়ারও পরিকল্পনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোল নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
ফের বাড়ছে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি :এদিকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি যথারীতি বাড়ানো হচ্ছে। করোনার কারণে সারাদেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দফায় দফায় বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। তবে ১৭ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক না হওয়ায় বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়ানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়লেও প্রাথমিক শিক্ষায় অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকবে।
আর মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার মতো কোনোই অবস্থা নেই। এ পরিস্থিতিতে ১৬ জানুয়ারির পর আবারও ছুটি বাড়ানো হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে কতদিন ছুটি বাড়ানো যায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ১৫ দিন থেকে এক মাস বাড়ানো হতে পারে। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।