বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। ১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করে ১৯৭৩ সালে নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মোগল আমলে ঢাকা শহরের নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। মূলত তা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার অদূরে সাভারে ৬৯৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। সেখানে প্রতিবছর প্রচুর শীতের পাখি আসে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট, আর ক্লাস শুরু হয় ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ওই বছরের ১২ জানুয়ারি। তাই এই দিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জাহাঙ্গীরনগর যাত্রা শুরু করে চারটি বিভাগ নিয়ে—অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান। এখন ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র ১৫০ জন। বর্তমানে ছয়টি অনুষদ ও চারটি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩৭টি বিভাগ নিয়ে চলমান দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ চালু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও দেশের একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও চালু আছে জাবিতে। বর্তমানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ছেলেদের জন্য রয়েছে আটটি হল ও মেয়েদের জন্য আটটি হল। মোট ১৬টি হলে আবাসিকভাবে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল এই শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা ধরনের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি নানা উত্সব পালনেও যেন পটু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তো জাবিকে বলা হয় সাংস্কৃতিক রাজধানী। জাহাঙ্গীরনগর মানেই যেন সব ধরনের উৎসব ঘটা করে পালন করা। হিম উৎসব, চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখসহ আবহমান বাংলার সব ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে জাবিতে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৯টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন। বেলুন উড়িয়ে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দিবসের উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
সকাল ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হবে। সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সন্ধ্যায় সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় বর্তমান শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা হবে।
পাশাপাশি জাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ জাতীয় নাট্যশালা, শিল্পকলা একাডেমিতে এক সম্মিলনের আয়োজন করা হয়েছে। আজ বিকেল তিনটায় শুরু হয়ে ওই আয়োজন রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য রক্ষার্থে এবং শিক্ষার্থীদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধিতে নির্মিত রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ৫১ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট দেশের সর্ববৃহত্ শহিদ মিনারটি অবস্থিত জাবি প্রাঙ্গণে। দেশের সর্ববৃহৎ গবেষণাগার সৈয়দ ওয়াজেদ আলী গবেষণাগারটি স্থাপিত জাবিতেই।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চারপাশ ১৬টি ছোটবড় জলাশয় দ্বারা আবৃত। শীতকাল আসতে না আসতেই নানা ধরনের অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয় জলাশয়গুলো। তাই তো জাবিকে বলা হয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। শহর থেকে দূরে যানবাহন ও কোলাহল মুক্ত এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ।