ইউরোপের বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এই গৌরবময় যাত্রায় সঙ্গী হয়েছে দেশের খ্যাতনামা কনজ্যুমার ইলেট্রনিক্স পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ‘কেটিএন টেকনোলজি’। তারা পরিবেশক হিসেবে রোমানিয়ায় ওয়ালটন ব্র্যান্ডের টিভি, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কেটলি, ব্লেন্ডারসহ অন্যান্য কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স বাজারজাত করবে।
রোববার (ফেব্রুয়ারি ১৪) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘ফার্স্ট ওয়ালটন টেলিভিশন ব্র্যান্ড বিজনেস ইন রোমানিয়া’ শীর্ষক এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ওয়ালটনের প্রতিনিধি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম এবং ‘কেটিএন টেকনোলজি’র পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার ফ্লোরিয়ান তিরলা’র মধ্যকার এক ডিস্ট্রিবিউটর বিজনেসের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম নূরুল আলম রেজভী, পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম ও নিশাত তাসনিম শুচি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনেটের (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, টেলিভিশন বিভাগের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন, সিনিয়র ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর সাঈদ আল ইমরানসহ আরও অনেকে।
এদিকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন কেটিএন টেকনোলজির জেনারেল ম্যানেজার ফ্লোরিয়ান তিরলা, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার সিমোনা করবিয়ানু এবং সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মিহাই করবিয়ানু।
রোমানিয়ায় ওয়ালটন আইবিইউ শাখার বিজনেস হেড সাঈদ আল ইমরান জানান, ২০২১ সালে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ১ লাখ ১৪ হাজার এলইডি টিভি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেটিএন টেকনোলজির। পাশাপাশি ওয়ালটন ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কেটলি ও ব্লেন্ডারের অর্ডারও দিয়েছে রোমানিয়ান প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসেই ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এলইডি টিভির প্রথম শিপমেন্ট রোমানিয়ায় পাঠানো হবে। ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কেটলি ও ব্লেন্ডারের শিপমেন্ট শুরু হবে এপ্রিলে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এসএম নূরুল আলম রেজভী বলেন, রোমানিয়ার বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে কেটিএন টেকনোলজি’কে সেরা মানের পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
ওয়ালটন হাই-টেকের পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের রয়েছে মাল্টিলেয়্যার কিউসি (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) সিস্টেম। আছে শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) টিম। তারা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এলইডি ও স্মার্ট টিভি তৈরি করছে। ওয়ালটন টিভি ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। এই সফল অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন পরিবারের সদস্য হিসেবে রোমানিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘কেটিএন টেকনোলজি’কে পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। ওয়ালটনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখায় তিনি কেটিএনকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, ওয়ালটন বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের ইলকট্রনিক্সের বাজারে সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার অর্জন করে নিয়েছে ওয়ালটন। গুণগতমান, মূল্য ও অন্যান্য সব দিক বিবেচনায় ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্য স্থানীয় বাজারের মতো বিশ্ববাজারেও সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদী।
ওয়ালটন হাই-টেকের আরেক পরিচালক নিশাত তাসনিম শুচি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের টিভিসহ অন্যান্য সকল পণ্য শুধু রোমানিয়াতেই নয়; বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রপ্তানি হবে।
ফ্লোরিয়ান তিরলা বলেন, ওয়ালটন টিভির পিকচার ও গুণগত মান খুব উন্নত। বাৎসরিক ১.৫ মিলিয়ন টিভির বাজার রয়েছে রোমানিয়ায়। যা কি না খুবই প্রতিযোগিতামূলক। ওয়ালটন টিভির উন্নতমান ও আমাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রোমানিয়ার বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড সফল হবে এবং দুপক্ষই লাভবান হবে।
ওয়ালটন আইবিইউ শাখার প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম বলেন, গত দুবছর ধরে ইউরোপের জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, স্লোভাকিয়ায়, স্পেন, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে টিভি ও কম্প্রেসর কম্পোনেন্ট রপ্তানি করছে ওয়ালটন। চলতি বছর ওয়ালটন ইউরোপের ২১টিরও বেশি দেশে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ও বিভিন্ন কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স রপ্তানির টার্গেট নিয়েছে।
ওয়ালটন টিভির সিইও প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ইউরোপের বাজারে ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি টিভি রপ্তানি হয়েছে। আলোচ্য চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ওয়ালটনের পণ্য প্রবেশের পথ সুগম হবে।
সূত্র জানায়, শতাধিক বিজনেস পার্টনারের মাধ্যমে ৩৫ টিরও বেশি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেবেলযুক্ত টিভি রপ্তানি করছে ওয়ালটন। ২০১৯ সালে যে পরিমাণ ওয়ালটন টিভি রপ্তানি হয়েছে তার ৩৪ শতাংশ ডেনমার্কে, ১৮ শতাংশ জার্মানিতে, ২২ শতাংশ গ্রিসে, ১৫ শতাংশ ক্রোয়েশিয়া ও আয়ারল্যান্ডে, ৬ শতাংশ পোল্যান্ডে এবং ৫ শতাংশ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে হয়েছে।