গতকাল [৭ মার্চ] পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সূচক একই সময়ে জোরালো সমর্থন পেয়েছে মানবিক সূচকের। মানব উন্নয়ন সূচকেও আমাদের অগ্রগতি বিস্ময়কর। যদিও আমরা এখনও মাঝ পর্যায়ে আছি। এক্ষেত্রে আমরা এখনও শ্রীলঙ্কা থেকে পিছিয়ে। এই একটা জায়গা যেখানে আমাদের ভবিষ্যতে অধিক মনোযোগ দেয়া দরকার।’
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য দেন মুহিত।
এক দশকের উন্নয়নের উদাহরণ টানতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের শুরুর বছরের পাঁচগুণ বাজেট বিদায়ের বছরে ঘোষণার কথা বলেন তিনি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করার বড় নির্দেশক হিসেবে কাজ করে বাজেট। যেটাকে আমরা ওই সময়েই ৫০০ শতাংশ বাড়াতে পেরেছিলাম।’
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সার ও লোহা প্রভৃতি শিল্প বিকাশের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পেরেছি। দারিদ্র্যের সীমা ৭০ ভাগ থেকে ২২ শতাংশে আমরা নামাতে পেরেছি। অতি দরিদ্রের সংখ্যাও নেমে এসেছে মাত্র ১০ শতাংশে।’
পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর হয়ে ওঠার কথা তুলে ধরেন সাবেক অর্থমন্ত্রী। অন্যান্য রপ্তানি খাতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেবল তৈরি পোশাক নয়, খুবই অগ্রগামী খাত ওষুধ এখন আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্য। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি। এমনকি সবচেয়ে কঠিন ওষুধ প্রশাসনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও আমরা রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি।’
বর্তমান সরকারের উদ্যোগে উন্মুক্ত সীমান্ত নীতি নেয়ার কারণে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মুহিত বলেন, ‘যদিও বিএনপিসহ অন্যান্য দল শুরুতে বিরোধিতা করেছিল, পরে তারা মেনে নেয়। উম্মুক্ত সীমান্ত হলে আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে আমরা আশপাশের ছয়টি দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে পারি।’ নদীপথগুলো সচল করার মাধ্যমে বাণিজ্যের সুযোগ বিপুল পরিমাণে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুহিত।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার আধুনিক প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কাজে লাগিয়েছে। অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক উন্নœতি ও বিনিয়োগের সুযোগ বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে বাংলাদেশ মিশনগুলোর আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগের যে সহায়ক পরিবেশ আছে, তার প্রচার অনেক সময় ঠিকমতো হয় না। আপনাদের দায়িত্ব হবে বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা, জনগণ ও বাংলাদেশি বংশধরদের সঙ্গে মিলে জানান দেয়া বাংলাদেশ হচ্ছে সম্ভাবনার দেশ।’
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।