তাই রমজান মাসকে সার্থক ও ফলপ্রসূ করতে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। যেগুলোর মাধ্যমে এই পবিত্র মাস সার্থক ও কল্যাণপ্রসূ হবে। ইবাদত-বন্দেগিতে রমজান-পরিকল্পনা সুন্দর ও গোছালো হবে। ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য রমজানের প্রস্তুতি উপলক্ষে সাতটি উপায়-নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো।
রমজানের ‘কাউন্ট ডাউন’
রমজানের আগমনের দিন গণনা শুরু করুন। মনে রেখে কিংবা ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে। এভাবে ক্ষণ-গণনা ‘মিষ্টি প্রতীক্ষা ও ভালো লাগা’ সৃষ্টি করবে। পরিবার কিংবা বন্ধুরা মিলে এমন আয়োজন করতে পারেন। এটি দৈনন্দিন আপনাকে ভিন্নরকম আনন্দ দেবে। পাশাপাশি প্রস্তুতিটাও সুন্দর হবে।
জ্ঞান অন্বেষণ ও পড়াশোনা
বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের সবকিছু আলাদা হয়। তাই রমজানের ব্যাপারে জানা-শোনা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ও পূর্ণভাবে ইবাদত-বন্দেগি পালনের স্বার্থে পড়াশোনা জরুরি। রমজানবিষয়ক জ্ঞান অন্বেষণ পথ সহজ করে দেবে। অনুপ্রেরণা, উদ্দীপনা ও আগ্রহ বাড়বে। রমজান সম্পর্কে যত বেশি জানা যাবে, তত বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে প্রতিদান ও পুরস্কারের পরিমাণ বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
করণীয়ের ব্যাপারে পরিকল্পনা
মুমিন স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত আমলে মগ্ন থাকে। তবে এখন থেকে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি কিছু সুচিন্তিত ও গোছানো পরিকল্পনা করা যায়। যেমন- কোরআন খতম, নিয়মিত তারাবির নামাজ, দান-সদকা, অন্যের সেবা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাহরি-ইফতার ইত্যাদি। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোনো ব্যাঘাত কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না। উপরন্তু দৈনন্দিন কাজকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি ও অন্য কিছুতে নিয়মতান্ত্রিকতা রক্ষা পাবে। রমজানও উপভোগ্য, সহজ ও আনন্দঘন হবে।
লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া
রমজানে বা রমজানের পরের প্রতিটি মুহূর্ত সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। কারণ, মানুষের নিয়তি কিংবা জীবনযাত্রার শেষ কোথায় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তাই অন্যদিকে রমজানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজও থাকতে পারে। যেমন পরীক্ষা, কারও বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান, বাসা বদলানো কিংবা আরও অন্য যে কোনো কাজ।
এ ধরনের কোনো কর্মসূচি থাকলে রমজান শুরু হওয়ার আগেই পরিকল্পনা করা উচিত। ঈদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের কেনাকাটা— প্রয়োজনে রমজানের আগেই সেরে নেওয়া যায়। এতে রমজান শুরু হওয়ার আগে প্রস্তুতি সম্পন হয়ে যাবে।
মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
রমজান স্বাভাবিকতই সিয়ামব্রত পালন, তারাবির নামাজসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা-বদান্যতার মাস। তাই রমজানের অপেক্ষায় বসে না থেকে এখন থেকেই ইবাদত-বন্দেগি করা শুরু যায়।
নফল নামাজ, দু-চারটা রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, মানুষের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা, উদারতা প্রকাশসহ অন্যান্য কাজের মাধ্যমে প্রিয়নবী (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণের চেষ্টা করা উচিত। এছাড়াও শাবান মাসের নফল রোজার সওয়াব অনেক বেশি।
নিজেকে প্রস্তুত করা
দৈনন্দিন কথোপকথন, স্বভাবজাত আচরণ-উচ্চারণ ও ব্যবহারিক কাজে-কর্মে পরিবর্তন আনা জরুরি। রমজান মাসেও আগের মতো কর্মকাণ্ড কিংবা আচরণ-উচ্চারণ থেকে গেলে তা নিন্দনীয়।
শুধু রমজানে ভালো হওয়ার কিংবা ভালো থাকার চেষ্টা করে পরে আগের মতো হয়ে যাওয়ার মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। পরনিন্দা, পরচর্চা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকা চাই। এবং গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ কাজে নিজেকে নিবেদিত হওয়ার চেষ্টা করা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বাজে অভ্যাস বদলানো
নিজের খারাপ ও বাজে অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করা দরকার। আর এখন থেকে সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। অনেকের দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে। তাই এখন থেকেই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হলে এটি ব্যবহারের মাত্রা কমানোর অনুশীলন করা জরুরি।
কঠিন মনে হলেও নিয়ত শুদ্ধ রেখে শুরু করলে, বাকি কাজ সহজ হয়ে যাবে। বান্দার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা চলার পথ সহজ করে দেন। দৃঢ় সংকল্প থাকলে সহজেই বাজে ও খারাপ অভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়।