এএলআরডি-র আয়োজনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহযোগী সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নারী-পুরুষ-আদিবাসীগণ অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি-র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি। এএলআরডি’র পক্ষে পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনা দেন কর্মসূচি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
এতে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন হাওর অঞ্চল থেকে বেসরকারি সংস্থা ইরা-র নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম ও হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা এবং কারিতাস-বাংলাদেশের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরিচালক অপূর্ব ম্রং ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ময়মনসিংহের সভাপতি মনিরা বেগম। প্রবন্ধ উপস্থাপক এসময় তার উপস্থাপনায় ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষক, গ্রামীণ নারী কৃষক, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য খাত ও উপখাত অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দের জন্য জোর দেন। তাছাড়া ভূমি সংস্কারের নামে উপখাত তৈরি করে এই নামে বাজেটে বরাদ্দ রাখারও দাবি জানান। এসময় তিনি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বান্ধব বাজেটের প্রতাশা করে খাত অনুযায়ি ২৯টি সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
প্যানেল আলোচনায় অপূর্ব ম্রং বলেন, শিক্ষানীতিতে পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় শিক্ষাপ্রদানের বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ও ঘর বিতরণে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা এখনো আদিবাসীদের সঠিক সংখ্যা জানিনা। আমাদের টেরিটরি ঠিক নেই। করোনায় আদিবাসী যুব নারীরা কর্ম হারিয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থান হয়ন ও কোন প্রণোদনাও পায়নি। তিনি বাজেট প্রণয়ণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিংএ আদিবাসীদের যুক্ত করার দাবি জানান। তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দের দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হল- ভূমি সংস্কারের অংশে আদিবাসীদের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি; ভূমি কমিশন গঠন ও বাস্তবায়ন, সমতলের দুর্গম এলাকার আদিবাসীদের শিক্ষার জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করা, আদিবাসী যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আদিবাসী সংস্স্কৃতি উন্নয়ন ও চর্চার জন্য গবেষণা।
সিরাজুল ইসলাম হাওর এলাকার সার্বিক সমস্যা তুলে ধরে হাওরের জন্য আলাদা বাজেটের দাবি তুলে ধরে বলেন, প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে । সেখানে সকল শ্রেণীর সম্পৃক্ততার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাওরে এখন ধান সংগ্রহ চলছে। ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। ধানের সংগ্রহ, মূল্য বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করতে হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকতার ফলে নতুন করে বেকারত্ব বাড়ছে। তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। হাওরে প্রচুর খাস জলাশয় রয়েছে যা এখন কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শ্রেণী পরিবর্তন করা হয় না। ফলে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিকে ভূমিসংস্কারের ভাবনায় যুক্ত করতে হবে এবং তার জন্য বাজেটে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মনিরা বেগম বলেন, দেশের আঞ্চলিক কৃষি, তার বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষক/কৃষি, গ্রামীণ নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত রয়ে যাবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সঠিক সময় কৃষি লোনসহ কৃষি ভতুর্কি, কার্ড সহায়তা এবং কৃষি প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য খাত ও উপখাত অনুযায়ি বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধিসহ দরিদ্র মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
কাশমির রেজা জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন ও বরাদ্দ দেয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ু ফান্ড থেকে হাওরের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান। হাওরের নদী খনন করতে হবে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা টাকার অভাবে হাওর লিজ নিতে পারে না। তাই তাদের জন্য ঋণ দিতে হবে এবং তার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। হাওরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে এবং তার জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। হা্ওরে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও হাওরউন্নয়নে গবেষনা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মহামারী কেরোনার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গ্রামে গঞ্জে কোভিড এর টিকা গ্রহণ ও সরবরাহের জন্যবরাদ্দ দিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে এএলআরডি-র কিশোর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা আলোচনার সুবিধার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তাছাড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচডিআরস ‘র পক্ষে গবেষক গাজী মোহাম্মদ সোহরওয়ার্দি বাজেট সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। এতে হুমায়ুন কবির, গৌতম চন্দ্র চন্দ, জান্নাতুল মরিয়ম ও ইমন প্রমূখ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
পরিশেষে, সভাপতি রওশন জাহান মনি বলেন, আপনাদের সকলের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ প্রতিবেদন আকারে জাতীয় পর্যায়ে একটি সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে। সেখানে আপনাদের দেয়া মতামতের প্রতিফল থাকবে আশা করছি। কোভিড-১৯ এর কারণে আলোচনাগুলো সমূহসামনাসামনি আয়োজন করতে পারছি না। তবে খুবই ভালো হতো আমাদের এই প্রক্রিয়ার সাথে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি যদি আমরা স্বাক্ষর সংগ্রহের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারতাম।