আমরা সাধারণত মনে করি, যে দোষ মানুষের মধ্যে সত্যি আছে, তা চর্চা করলে গিবত হয় না। অথচ হাদিসের ভাষায় এটিকেই গিবত বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তা-ই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ (তুহমত), যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)
ইসলামের অন্যতম ফরজ নেক আমল রোজা পালন অবস্থায়ও আমরা আমাদের পারস্পরিক কথাবার্তায়, লেখালেখিতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পাপের চর্চা করছি অনায়াসে। অথচ পরনিন্দায় নেক আমল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহর কাছে আমল কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ এতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে। প্রথমত, গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না। দ্বিতীয়ত, গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং তৃতীয়ত আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হয়ে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৩৭)
রাসুল (সা.) পরনিন্দাকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ।’ তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন এটা কিভাবে? তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১২)
এই পাপের পরকালীন পরিণতি অনেক কঠিন। গিবতের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে আমি কিছু লোককে দেখলাম, তাদের তামার নখ রয়েছে এবং তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুক আঁচড়াচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল, এরা কারা? তিনি বলেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গিবত করত এবং তাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৯)
আমাদের সবার উচিত, পবিত্র মাহে রমজানে এই অভ্যাসটি সারা জীবনের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করা। কারো ব্যাপারে নিন্দা করে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। যদি সে জীবিত না থাকে, তাহলে তার মাগফিরাতের দোয়া করা। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার পরনিন্দা করেছ, তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করো, এভাবে বলবে, হে আল্লাহ তুমি আমাকে এবং ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দাও।’ (শুআবুল ঈমান, বাইহাকি, হাদিস : ৬৩৬৭)
সূত্র: কালের কণ্ঠ