শুক্রবার (২৮ মে) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রারদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিরাজমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা জরুরি। তাই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা সরাসরি ও অনলাইন পদ্ধতিতে গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রেক্ষিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও শিক্ষাজীবনের কথা বিবেচনা করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
নির্দেশনা মোতাবেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পাঠদানের পাশাপাশি পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ করার লক্ষ্যে পরীক্ষাও গ্রহণ করেছে। বর্তমানে চলমান এ অবস্থার মধ্যে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় ইনপারসন ক্লাস ও সব ধরনের পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এক বছরের বেশি সময় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকায় এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা দুটি টার্মের প্রায় সব কোর্স সম্পন্ন করেছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে তৃতীয় সেমিস্টারের পাঠদানও শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস টেস্ট ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। কিন্তু পর পর দুই সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ না করায় কোন সেমিস্টারের পরীক্ষা আগে হবে, করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরীক্ষার আগে কত দিন রিভিউ ক্লাস হবে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন সেমিস্টারের কোর্সসমূহের ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি, আন্তঃসেমিস্টার অবকাশ, প্রিরিকউজিট কোর্স সম্পন্ন না করে পরবর্তী কোর্স সম্পন্নসহ বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
অপরদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আবাসিক হলে আসন স্বল্পতা থাকায় একই কক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীর অবস্থান এবং সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সেমিস্টার শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনেও ইনপারসন চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
সমান্তরালভাবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির অভাব, অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার নির্ভরযােগ্য সফটওয়ার ও যন্ত্রপাতি নির্বাচন এবং অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রূপরেখা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছিল না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মজুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরােজা বেগমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অনলাইন ও ইনপারসন উভয় পদ্ধতি চালু রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
সুপারিশে তারা বলেন, বিভিন্ন দেশে লকডাউন অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস হয় এবং লকডাউন ওঠে গেলে ইনপারসন ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার মতামত দেন।