পাস হওয়া এ বাজেট রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর বুধবার ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হবে। গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বাজেট পেশ করেন।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের পর পুরো অধিবেশন জুড়ে এর ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। সম্পূরক বাজেটসহ বাজেটের ওপর ছয় দিনে ১৫ ঘণ্টার মতো আলোচনা হয়।
এবারের বাজেটের শিরোনাম- ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। শিল্পে, রাষ্টায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে আর্থিক বিনিয়োগ সহায়তা, ভর্তুকি খাতে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, সুদ পরিশোধ বাবত ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
এছাড়া বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ এক লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে এক লাখ ৮৪৭ কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো খাতে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতের মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর বাইরে সাধারণ সেবা খাতে এক লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেটে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ছয় দশমিক দুই শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে এক লাখ এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার এক কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক সাত শতাংশ, পরিবহন-যোগাযোগ খাতে ১১ দশমিক নয় শতাংশ, সুদ খাতে ১১ দশমিক চার শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে সাত শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ১৮ দশমিক সাত শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ছয় দশমিক দুই, স্বাস্থ্য খাতে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে চার দশমিক আট শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ, কৃষি খাতে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ, গৃহায়ন খাতে এক দশমিক এক শতাংশ, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে দশমিক আট শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাতে দশমিক সাত শতাংশ এবং বিবিধ খাতে দশমিক আট শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে বৈশ্বিক মহামারি করোনা (কোভিড-১৯) মোকাবিলার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সার্বিক সেবা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।