ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফকির রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালন করেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম।
ওয়েবিনারে ২০২১-২২ বাজেট দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও জনগণের জীবন-জীবিকায় কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. সেলিম উদ্দিন বলেন, বাজেটের সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান এবং কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সহায়তা ও সহযোগিতার মাধ্যমে জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। সুতরাং জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ জীবনকে সুরক্ষা অর্থাৎ স্বাাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে নূন্যতম রাখার কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে জীবিকা তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চারের যাবতীয় সম্ভাব্য নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকার বাজেট সংসদে গৃহীত হয়েছে। যেখানে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছে ৩,৮৯,০০০ কোটি টাকা এবং ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,১৪,৬৮১ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, এই বাজেট জীবন ও জীবিকার মধ্যে এক চমৎকার সমন্বয়। তবে এই বাজেটের সুফল, ফলপ্রসূ, ফলাফল ও কার্যকারিতা পুরোপুরি বাস্তবায়নের উপর নির্ভরশীল। জীবিকার প্রশ্নে ড. সেলিম বলেন ব্যবস্যা বাণিজ্য শিক্ষাকে অগ্রাধিকার পূর্বক সম্ভাব্য সকল সুযোগ সুবিধা বিশেষ করে রাজস্ব প্রণোদনা, রাজস্ব নীতি, নিয়ম ও কৌশল সহজীকরণের মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে তেজী ভাব ও সুদৃঢ় হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পগুলো যাতে কোভিড পূর্বাবস্থায় ফিরতে পারে, ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প যাতে সম্প্রসারণ হতে পারে, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং সর্বপুরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো বােেজটে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের রিডিস্ট্রিবিউট সিস্টেম প্রসারিত করা প্রয়োজন। এ কাজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে। আজকে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার সুবাদে একচেটিয়াভাবে একটি বড় শ্রেণি গড়ে উঠেছে। উচ্চ শ্রেণির মানুষের আয়ের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের অধিকার রয়েছে। এ জন্য রিডিস্ট্রিবিউশন জরুরি।’
অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাজেটের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে কৃষি। কৃষি আমাদের বাাঁচিয়ে রেখেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি আমাদের এই সংকটকালেও বাঁচিয়ে রেখেছে। শহরের অনেকে গ্রামে চলে গেছে। গ্রাম কিন্তু তাদের ফেরত দেয়নি। নন-ফরমাল ইকোনমি গ্রামে বাড়ছে। সেখানে কর্মহীনরা যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু নগরে দারিদ্র বাড়ছে। একটি শক্তিশালি সামষ্টিক অর্থনীতি আছে বলেই আমরা টিকে আছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন বৈষম্যের সঙ্গে বর্তমানে সাইবার পোভার্টি গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। শহর আর গ্রামের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজের জন্য লড়াই করেছেন বঙ্গবন্ধু। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ঐক্যবদ্ধ জাতির বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচারিত হয়।