সাপ্তাহিক বাংলাদেশ আয়োজিত দ্বিতীয়বারের এ উৎসব আয়োজনের সহযোগী ছিলো জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি। বিশেষ সহযোগিতায় ছিলো জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার। বিশাল এলইডি স্ক্রীনে আতশবাজির শব্দ সহ ভেসে উঠে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য চিত্র। সন্ধ্যা ৭টায় মূল মঞ্চে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। ফোর্থ অব জুলাইয়ের এবারের উৎসবে ছিলো বারবিকিউ, নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে নির্বাচিত বাংলাদেশী দু’নারী এটর্নি সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফের সংবর্ধনা এবং আতশবাজি।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ সাজ্জাদ। বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও ইমাম মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। প্রবাসের বিশিষ্ট উপস্থাপক আশরাফুল হাসান বুলবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। এরপর সদ্য অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচনে বেসরকারীভাবে ব্রুকলীনের কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে শাহানা হানিফ-কে ডা. বুশরা ওয়াজেদ, কুইন্স কাউন্টির জজ পদে জয়ী এটর্নী সোমা সাঈদ-কে মাহিয়া শুভ্র এবং ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু-কে ইয়াফিজ ইসলাম ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান হয়।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কের স্টেট সিনেটর জন ল্যু, স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রীন, সাবেক এমপি ও সাপ্তাহিক ঠিকানা’র চেয়ারম্যান/ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এম শাহীন, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, সিটি নির্বাচনে প্রাইমারীতে বিজয়ী শাহানা হানিফ ও সোমা সাঈদ, ডেমোক্র্যাট পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট এট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, জেএমসি’র সেক্রেটারী মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল, প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গণি, উপদেষ্টা সালেহ আহমেদ, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী ও ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ থেকে কাউন্সিলম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, প্রফেসর শাহাদাত হোসেন, জূরকার হায়দার, আবু নাসের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ, ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গণি, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে কাউন্সিলম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে আগত অতিথি ও দর্শক শ্রোতাদের অভিনন্দন জানান। বিশেষভাবে অভিনন্দিত করেন গত ২২ জুনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে বিজয়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্টের বিচারক পদে এটর্নী সোমা সাঈদ ও সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট ৩৯ থেকে নির্বাচিত শাহানা হানিফকে। এদের দু’জনই বেসরকারীভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হয়েছেন। ডাঃ খান বলেন, এটর্নি সোমা এবং শাহানা হানিফ বাংলাদেশী আমেরিকানদের গর্ব। যুক্তরাষ্ট্রে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাদের দু’জনেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং প্রথম সাউথ এশিয়ান মুসলিম নারী। রাজনীতিতে তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ডা. ওয়াজেদ এ খান। অনুষ্ঠানের সহযোগী সংগঠন, জেএমসি, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ, সকল পৃষ্ঠপোষক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। ডা. খান বলেন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ কমিউনিটির নির্ভিক মুখপত্র। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র প্রশংসা করেন। তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানান এটর্নি সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফকে তাদের অভাবনীয় বিজয়ের জন্য।
কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে নির্বাচিত এটর্নি সোমা সাঈদ তার সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরেন। আগামী নভেম্বর অনিুষ্ঠিতব্য জেনারেল ইলেকশনে ভোট দিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করার এবং নতুন প্রজন্মকে মূলধারার রাজনীতিতে উৎসাহিত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ ব্রুকলীন থেকে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত শাহানা হানিফ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তাকে সংবর্ধিত করার জন্য। বনেদী নয় ব্রুকলীনের এমন একটি প্রতিবেশ থেকে কিভাবে তিনি আজকের পর্যায়ে উঠে এসেছেন তা জানান দর্শক শ্রোতাদের। পরিবারে সন্তানদের বেড়ে উঠা এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অভিভাবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শাহানা হানিফ।
শাহানা বলেন, আমাদের বিজয় বাংলাদেশী কমিউনিটির বিজয়। এই বিজয় ধরে রাখতে হবে। যেকোন নির্বাচনে ভোটে অংশ নিতে হবে। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফের বিজয়কে বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে উল্লেখ করেন। মূল ধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অংশ গ্রহণকে আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যান্য বক্তারা, আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র চমৎকার আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফের জয়লাভে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেন বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমূল আহসান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক ও আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী মনোয়ারুল ইসলাম, ঠিকানার বার্তা সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি আকবর হায়দার কিরণ, বাংলা ভিশনের নীহার সিদ্দিকী, বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক সানাউল হকসহ অনেকে।
উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ:
ফোর্থ জুলাইয়ের উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো তাক লাগানো ও চোখ ধাঁধানো আতশবাজি, ডিজিটাল পর্দায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রামাণ্য চিত্র, এলিস আইল্যান্ডে অভিবাসীদের আগমনের প্রামাণ্য চিত্র ও মজাদার বারবিকিউ। বিকেল ৫টার পর থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকে নারী পুরুষ ও শিশুরা। অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। রাস্তার মাঝখানে ডিজিটাল মঞ্চের পর্দায় ভেসে উঠে আতশবাজির বর্ণিল চিত্র। সন্ধ্যার পর মূল মঞ্চে অতিথিরা যখন কথা বলছিলেন তখন অনুষ্ঠান স্থলের পাশে চলে মুহুর্মুহু আতশবাজি। পুরো এলাকা ঝলকে উঠে। আকাশের দিকে ছুড়া আতশবাড়ি বিচ্ছুড়িত হয়ে আছড়ে পড়ে নীচের দিকে। এসময় ভিন্নমাত্রায় আমেজ সৃষ্টি হয়। বিপুল সংখ্যক দর্শক শ্রোতা মোহনীয় এ দৃশ্য উপভোগ করেন আনন্দভরে।
যাকাত ফাউন্ডেশন শিশুদের জন্য চিপস ও জুস এবং বড়দের জন্য মাস্ক বিতরণ করে। এছাড়া হ্যান্ডটেক মাস্ক বিতরণ করে। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ পথে ছিলো কভিড টেস্টেও ব্যবস্থা। স্বাধীনতা দিবসের এ অনুষ্ঠানে কার্যত পরিণত হয় মহা-মিলন মেলায়। রাত সোয়া ১০টায় আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘটলেও উৎসবের আমেজ অব্যাহত ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত।