বিশ্ব বনাম বাংলাদেশের সমস্যা

বিশ্ব বনাম বাংলাদেশের সমস্যা
যদি এই পৃথিবীতে সকল মানুষের সমান অধিকার না থাকে, যদি সবার দাবির মূল্যায়ন না করা হয় তাহলে কি দরকার গ্লোবাল প্লাটফর্ম রেখে? ‘কোথা চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়? ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার!’
নিজ নিজ ঘরে কপাট লাগিয়ে যার যার মতো করে সবাই তালা মেরেছে। সময় এসেছে সে তালা ভাঙার। পৃথিবীকে যদি আমরা সত্যিকারার্থে মানবজাতির গ্লোবাল প্লাটফর্ম হিসেবে গণ্য করি, তবে আমাদের গ্লোবাল সমন্বয় ঘটাতে হবে। নামে গ্লোবাল প্লাটফর্ম কাজে একলা চলো নীতি কাম্য হতে পারে না।

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ঘরে কোনও বয়স্ক লোক নেই, থাকলেও তার কথা কেউ শুনছে না। দেশে কোনও ভালো নেতা নেই, থাকলেও তাকে কেউ মানছে না। বিশ্বে কোনও কিছুই নেই থাকলেও তা বিপদে কাজে আসছে না। এর মূল কারণ চরম সমন্বয়হীনতা।

এমনটি যখন সঙ্কট ঠিক তখন এসে হাজির হয়েছে নোবেল করোনা ভাইরাস, প্রথমে চীন তারপর গোটা বিশ্বে। বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানগণ বছরে কয়েকটি জরুরি বৈঠকে যেমন জাতিসংঘ, WHO, ইইউ, ন্যাটো, বিশ্ব আবহাওয়া চুক্তি, G7 গ্রুপ ইত্যাদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। তবে তারা সত্যিকারার্থে জানে না কার কী দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কারণ প্রণীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার কমিটমেন্ট এবং তার ফলোআপ করা। ওয়াদা বা কমিটমেন্ট ভঙ্গ করলে কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া, কিন্তু দুঃখের বিষয় সব ধরনের ফোরাম থাকা সত্ত্বেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং দুর্বল ম্যানেজমেন্টের কারণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে অনেক কিছু প্রোমিজ করছে, ভুল করছে, ভুলকে স্বীকার করছে না। বরং সমস্ত দায় অন্যের ঘাড়ে চেপে দিয়ে যার যা খুশি করছে। বলা যায় হাওয়ালে বৃন্দাবন।

রাশিয়া মনে করে, তারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে। আমেরিকা মনে করে তারা যা বলবে তাই হবে। চীন বলছে, কেউ বলবে কেউ বলবে না তা আর হবে না। এ ছাড়াও চলছে ক্ষমতার বাহাদুরি। এই হচ্ছে বর্তমান গ্লোবাল নেতাদের পরিচয়।

বিশ্বনেতাদের একটি দিক বেছে নিতে হবে। যেমন আমরা বৈষম্যের পথ নাকি সংহতির পথ অবলম্বন করব? যদি আমরা বিভেদ বেছে নিই তবে এটি কেবল সঙ্কটকে দীর্ঘায়িত করবে না, ভবিষ্যতে আরও খারাপ বিপর্যয় ঘটাবে। আর যদি বিশ্বব্যাপী সংহতি বেছে নেই, তবে এটি কেবল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়, ভবিষ্যতের সমস্ত মহামারী এবং সঙ্কটের বিরুদ্ধেও বিজয় হবে। যেমন বর্তমান করোনা সঙ্কটে আমেরিকা হঠাৎ করে ইইউ থেকে সমস্ত ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দিল। তারা ইইউকে একটি অগ্রিম নোটিশ দেওয়ার কথাও ভাবেনি। আবার জানা গেলো, আমেরিকা নতুন কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের একচেটিয়া অধিকার কিনতে একটি জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাকে এক বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিল যা শুনেছি জার্মানির সেই কোম্পানি প্রত্যাখান করেছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি সঙ্কট একটি সুযোগ। সেক্ষেত্রে একে অপরের পরামর্শ নিতে হবে এবং পরস্পরের প্রাপ্ত ডেটার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এখন নিজ স্বার্থে যদি দেশগুলো সঠিক তথ্য গোপন করে বা ভুল ডেটা দেয় তবে ভুল তথ্য বা ডেটার কারণে অন্যদের বড় ক্ষতি হবে। যেমন চীন ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এবং এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোর সঠিক তথ্য কি সত্যি সত্যিই বিশ্বের সাথে শেয়ার করেছে?

বর্তমান মহামারী মানব জাতিকে বিশ্বব্যাপী তীব্র বিপদ উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে। বর্তমানে যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করছে নোবেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে। আমাদের চিকিৎসার সরঞ্জাম উৎপাদন এবং বিতরণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী বিশেষায়িত কিটস এবং শ্বাসযন্ত্রের মেশিনের প্রয়োজন। যদি এক দেশের অব্যবহৃত রিসোর্স অন্য দেশগুলি ব্যবহার করার সুযোগ না পায় তাহলে বর্তমান মহামারিটি থামানো যেমন কঠিন হয়ে পড়বে ঠিক আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদেরও একই সমস্যা হবে যদি আমরা এর সমাধান না করে যাই। সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ স্থানীয়ভাবে যার যার মতো চেষ্টা না করে যদি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে দ্রুততার সাথে কাজে লাগাতে সক্ষম হতে পারে তাহলে মানবজাতির জীবন রক্ষা এবং উপায়গুলো আরও সুষ্ঠুভাবে ব্যবহৃত হবে।

যুদ্ধের সময় দেশগুলি যেমন মূল শিল্পগুলোকে জাতীয়করণ করে, তেমনি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনগুলোকে কেবল জাতীয়করণ নয়, আন্তর্জাতিকীকরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু তা হচ্ছে না। ফলে আজ যা আমাদের দেশে দরকার পরবর্তী সময়ে অন্য দেশগুলোর তার প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা নেই। চিকিৎসা কর্মীদের মধ্যে পুল করার জন্য বিশ্বপ্রচেষ্টা প্রয়োজন। যেমন বর্তমানে কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো চিকিৎসা সহায়তা করতে পারে যেখানে সঙ্কট বেশি। একইসাথে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে চিকিৎসা কর্মীদের পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সাথে জ্ঞান অর্জন করাও একটি প্রশিক্ষণের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজন।

প্রতিটি সরকার যদি অন্যের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে কেবল নিজের স্বার্থেই কাজ করে, তবে ফলাফল হবে হতাশা ও বিশৃঙ্খলপূর্ণ এবং বিশ্বে একটি গভীর সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। বিশ্বব্যাপী কার্যকর পরিকল্পনার একটি সমন্বয় ঘটানো দ্রুত প্রয়োজন। যেমন ভ্রমণের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী চুক্তিতে পৌঁছানো এখন জরুরি প্রয়োজন। কয়েক মাস ধরে সমস্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে যা একটি অবিশ্বাস্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এটা দরকার ছিল। কিন্তু এখন যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে পৃথিবী শুধু বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। সব দেশকে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ভ্রমণকারীদের সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা শুরু ও তা অব্যাহত রাখতে হবে। বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ব্যক্তিদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে হবে। যদি নিজ দেশ ত্যাগ করার সময় সতর্কতার সাথে ভ্রমণকারীদের গ্রহণযোগ্য স্ক্রিন করে বিমানে উঠার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তাদের জন্য অন্য দেশে ঢোকা বাঁধা হবার কথা নয়। সেক্ষেত্রে পরস্পরের কর্মের উপর আস্থা থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে দেশগুলো খুব কমই এই বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

কী করণীয় থাকতে পারে এর থেকে রেহাই পেতে? একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মত বিনিময় করতে হবে। কূটনৈতিকদের নতুন প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদেরকে জানতে হবে সমস্যা কী এবং কিভাবে তার সমাধান করতে হয় ইত্যাদি। সবশেষে বলতে চাই, আমরা যদি এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব না দিই তবে ভবিষ্যতে করোনার মতো হাজারও সমস্যা দেখা দিবে, কিন্তু করুণা মিলবে না।
UK left EU, because, too many foreigners were coming to the UK. But, Boris, could not stop Corona. TRUMP was worried about the Mexicans, who come to the USA to only work for the Americans. They don't kill like CORONA! EU stopped the refugees from Syria, but failed to stop the Chinese virus. Indian PM MODI started deporting the illegal Muslim immigrants who have been living there for decades. But, his border guards failed to stop the CORONA from entering into India. HUMAN POWERS and the NUCLEAR WEAPON are SUPER POOR! মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের সমস্যা মানে গোটা বিশ্বের সমস্যা, আবার বিশ্বের সমস্যা মানে বাংলাদেশের সমস্যা। লোকাল কনসার্ন গ্লোবাল সল্যুশন।

রহমান মৃধা, দূরপরবাস সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

২১ বাংলাদেশি নাগরিককে সম্মাননা দিল ব্রুনাই হাইক‌মিশন
মালয়েশিয়ায় ২৫২ বাংলাদেশিসহ ৫৬৭ জন আটক
বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদনে সময় বাড়ালো কানাডা
৩ হাজার ৩৭৫ প্রবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত
লটারিতে ৩ কোটি টাকা জিতলেন বাংলাদেশি প্রবাসী
ত্রিশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন নিহত দুই প্রবাসীর পরিবার
লটারিতে ৩ কোটি টাকা জিতলেন বাংলাদেশী গাড়িচালক
চীনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খুলে দিলো মালদ্বীপ
মালয়েশিয়ায় একদিনে ৩ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ