৩৮ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারকে নিয়ে দারুণ একটা লটারিই খেলেছিলেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। সে লটারি লেগে গেছে পরিকল্পনামতোই। ক্রিস্টিয়ান ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে ব্যাট চালিয়েছেন নিজের মতো করেই। সাকিব আল হাসানের বোলিং যেখানে আগের তিনটি ম্যাচে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল অস্ট্রেলীয় শিবিরে, সেখানে তিনি সাকিবকেই এক ওভারে পাঁচবার ছক্কা মেরে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেকটা। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড বলছে, আগামী অক্টোবর–নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত আর ওমানে অনুষ্ঠেয় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলীয় দলে থাকার সুযোগটা আরও পাকাপোক্ত হলো ক্রিস্টিয়ানের।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাই আসলে ভাবনা অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশ সফরে এরই মধ্যে সিরিজ হেরে যাওয়া, বাংলাদেশি বোলারদের বিপক্ষে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম, স্পিন বোলিং খেলায় ব্যর্থতা—এসব নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে যে কন্ডিশনে অস্ট্রেলিয়া খেলছে, আগামী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কন্ডিশন এর চেয়ে অবশ্যই অনেকটা ভালো থাকবে, ‘আমি মনে করি না বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় দলের পারফরম্যান্স, সিরিজ হার—এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার খুব একটা কারণ আছে। এ দলে অ্যারন ফিঞ্চ ফিরবে, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথরাও ফিরবে। মারনাস লাবুশেন কিংবা মার্কাস স্টয়নিসদেরও যদি যোগ করা হয়, তাহলে ব্যাটিংয়ের চেহারাটা তো এমন থাকবে না।’
বাংলাদেশ সফরে ৩ নম্বরে মিচেল মার্শের ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে উচ্ছ্বসিত গিলক্রিস্ট। তিনি মনে করেন, মার্শের ফর্মের কারণে স্মিথ একটু নিচে নেমে হাল ধরতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া অনেক আগে থেকেই যেহেতু ইনিংসের শেষ দিকে একটু সমস্যায় পড়ছে, তাই স্মিথের নিচে নামাটা ভালোই কাজে দেবে।
বাংলাদেশের কন্ডিশন কঠিন, এটা মেনে নিয়েও গিলক্রিস্ট তা নিয়ে খুব চিন্তিত নন। সাবেক অস্ট্রেলীয় তারকা মনে করেন, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এশিয়াতে হলেও সেখানে কোনোমতেই বাংলাদেশের মতো কন্ডিশনের মুখোমুখি কাউকে হতে হবে না, ‘টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কন্ডিশন পুরোপুরি ভিন্ন হবে। সেখানে বল নিয়ে না ভেবে সবাই ব্যাটিংয়ে কীভাবে চার–ছয় মারবে, সেটি নিয়েই ভাববে।’
তবে গিলক্রিস্টের ভাবনাটা অন্য জায়গায়। কিছুটা ধীরগতির বোলিং কিংবা স্পিনের বিপক্ষে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের সংগ্রামের ইতিহাসটা নতুন নয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দলকে সামনে ভালোই সমস্যায় পড়তে হতে পারে, ‘এটা তো লুকোছাপার কোনো বিষয় নয়। অস্ট্রেলীয় দল স্পিনের বিপক্ষে কিংবা একটু ধীরগতির বোলিংয়ের বিপক্ষে সব সময়ই একটু বিপাকে পড়ে। উপমহাদেশে খেলতে গেলে এটাই অস্ট্রেলিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে চারটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচই হয়েছে লো স্কোরিং। বিশেষ করে ইনিংসের শেষের দিকে মিরপুরে রান করতে গিয়ে ভুগেছে দুই দলই। সে কারণেই গতকাল অস্ট্রেলিয়ান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার হঠাৎ করেই ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠান। তাঁর ওপর নির্দেশ ছিল পাল্টা–আক্রমণের। সেটি ক্রিস্টিয়ান খুব ভালোই করেছেন। পাওয়ার প্লের সুবিধাটা পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছেন তিনি। অবশ্য সাকিবকে এক ওভারে যেভাবে পাঁচ ছক্কায় মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেছেন, তাতে পাওয়ার প্লের মধ্যে তিনি ব্যাটিং করছেন কি না, সেটি খুব বড় বিষয় ছিল না।
এমন হাত খুলে খেলেও ক্রিস্টিয়ান কবুল করেছেন মিরপুরে যে চার ম্যাচ হলো, সেটি তাঁর দেখা সবচেয়ে কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশন, ‘আমি এমন কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশন কোথাও দেখিনি। আমার ক্যারিয়ারে এটা পুরোপুরি অন্য রকম একটা অভিজ্ঞতা, যেটির সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না।’