পৃথিবীর বুকে এক সময় বিচরণ করতো যে অতিকায় ডাইনোসর, আজ শুধু পাওয়া যায় তাদের হাড়গোড়। কারণ, এখন থেকে প্রায় ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এক ভয়ঙ্কর ঘটনার পরিণতিতে তারা সবাই মারা গেছে। গবেষকরা মনে করেন পৃথিবীতে এক বিরাট আকারের গ্রহাণুর আঘাতে যে বিস্ফোরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছিল সেটাই ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কারণ। ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পর পৃথিবীতে শুরু হয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের যুগ।
এটাও জানলাম আগামী কয়েক লক্ষ বছরের মধ্যে আরব এবং আফ্রিকার মাঝখানে যে রেড সি বা লোহিত সাগর রয়েছে (যা হচ্ছে ভারত মহাসাগরের একটি বর্ধিত অংশ) যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করেছে। এই লোহিত সাগর সময়ের সাথে ( প্রতি বছর নাকি ১৬ মিলিমিটার করে বাড়ছে) বড় সাগরে পরিণত হবে এবং এতে করে আফ্রিকার সাথে এশিয়ার দূরত্ব আরো বেড়ে যাবে ইত্যাদি।
তারপর শুরু হলো ক্যাথলিক প্রিস্টের উপর আলোচনা। ক্যাথলিক প্রিস্টরা নিজেরা বিয়ে করেন না তবে অন্যদের বিয়ে দেন। তিনি বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করলেন। ভালোবাসার উপর বর্ণনা দিতেই বললেন, ‘জীবনে একবার এক নারীকে ভালোবেসেছি এবং সেটাই ছিল প্রথম এবং শেষ’। সবাই অবাক! বলে কি এই প্রিস্ট? কিভাবে সে এমনটি করতে পেরেছিল? তারপরও কিভাবে সে প্রিস্ট হয়েছে?
মুহূর্তের মধ্যে তার কথা শেষ না হতেই হইচইয়ের সঙ্গে পরিবেশটি ভয়ঙ্কর মোড় নিতেই তিনি তার কথা সমাপ্ত করতে শুরু করলেন। এমন করে ‘তিনি ছিলেন আমার মা, শুধু মাকে ভালোবেসেছি, তিনিই ছিলেন আমার প্রথম ও শেষ নারী যাকে আমি ভালোবেসেছি।’
সবাই চুপ হয়ে গেলেন এবং বেশ লজ্জার অনুভূতি উদয় হলো। প্রিস্টের কথা শেষ না হতেই সবার এমনটি ধারণা হওয়া মুহূর্তটি পাল্টে দিলো এক নেগেটিভ চিন্তা দিয়ে। এমনটি কিন্তু সচরাচর ঘটে। কথা শেষ না হতেই অনেকেই আমরা সমাধানে চলে যাই।
আমার ভাবনাই তখন শুধু একটিই চিন্তা ছিল, তা হলো ক্যাথলিক প্রিস্ট জীবনে বিয়ে করেননি এবং তিনি জানেন না বিয়ের জীবন সম্পর্কে। সংসার করা এক সঙ্গে থাকা, একটি পরিবার চালানো, ছেলে-মেয়ের ওপর দায়িত্ব-কর্ত্যব্য কী? অথচ দিব্যি আদেশ-উপদেশ দিয়ে গেলেন কিভাবে কী করতে হবে না হবে তার ওপর। জানা-অজানার ওপর! তিনি তার পড়াশোনার অভিজ্ঞতা থেকে সব বলে গেলেন।
টিভি দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনে তবে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে বিশ্ব ভ্রমণ ছেড়ে হাজির হয়েছি বেহেশত এবং দোজখে। সর্বনাশ! এ কী ব্যাপার? পৃথিবীর সাথে একেবারেই যে মিল নাই তা না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ মিল রয়েছে বিশেষ করে দোজখে। এ এক ভিন্ন জগত। অদৃশ্য সব কিছুই মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করলো। আশ্চর্য! হঠাৎ দেখি আমার এলাকার এক ছোটভাই নাম জুলফিকার। সেও সেখানে খুব ব্যস্ততার সাথে এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরাঘুরি করছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার কখন এলে এবং কী অবস্থা? উত্তরে বললো, ভাই বেহেশত খুব নিরিবিলি জায়গা। কিছুদিন ওখানে থাকার পর মনে হয় ভালো লাগবে না। আমি বললাম, সেকি পৃথিবীর মানুষ এত কিছু করছে বেহেশতে থাকার জন্য আর তুমি বলছো ভালো লাগবে না, মানে, মানে কী? জুলফিকার কথা না বাড়িয়ে বললো আসেন নিজ চক্ষে দেখুন কোথায় কী হচ্ছে। আমি বললাম, চল দোজখের অবস্থা দেখি আগে। সে এক হইহুল্লোড় ব্যাপার, যাকে বলে নান্ডিভাস্টি অবস্থা। মারধোরসহ কঠিন শাস্তি চলছে, তা সত্ত্বেও ফাঁক পেলেই অকাম কুকামের শেষ নেই। কয়েকজন দেখি বসে বসে হুক্কা টানছে। জুলফিকার বেশ কিছুদিন আগে এসেছে তাই ওকেই জিজ্ঞেস করলাম ওরা কারা? উত্তরে বললো চিনলেন না? ওরা সবগুলো বাংলাদেশি, বেহেশত ছেড়ে পালাইছে পান আর হুক্কোর টানে। আমি বললাম বল কী? জুলফিকার বললো, ভাই আমি কয়দিন বেড়াতে এসে নিজেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। বেহেশতে কয়েকদিন ছিলাম, কাউকে চিনিনে, সবাই অপরিচিত। এক অস্বস্থিকর অবস্থা, শেষে এই পাশে চলে এসেছি। শত সমস্যা থাকলেও এখানে মজাই আলাদা ভাই। জুলফিকারের কথা শুনছি আর ঘুরে ঘুরে দেখছি, হঠাৎ জুলফিকার হাওয়া হয়ে গেল। কী করা! ফোন করবো বলে টেলিফোন পকেট থেকে বের করতে দেখি, সে কচু চুরি হয়ে গেছে। অবাক কান্ড, এখানেও চোর আছে? কিছুক্ষণ যেতে বেহেশতের কাছে প্রায় চলে এসেছি, একের পর এক প্রশ্ন অলৌকিকভাবে আসতে শুরু করলো। সারা জীবনের শখ বেহেশতে যাবার, আজ তা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হবে বিশাল ব্যাপার! সবে ঢুকেছি। হঠাৎ রহমান, রহমান বলে ডাকছে আমার বউ। রাত বারোটা বাজে সোফা ছেড়ে উঠো বিছানায় যাবে। ঘুম ভেঙ্গে গেল, খাটে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি ”Oh, think twice, 'cause it's another day for me in paradise”. ভাবছি আর নিজেকে মনে মনে বলছি “এখনও সময় আছে আল্লাহ নবীর নাম লও..”।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com