ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, কেরালায় সুস্থ হওয়ার হার ভারতের বাকি রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই-এম)শাসিত রাজ্য সরকারের দৃঢ় কিছু পদক্ষেপের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো গেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা, তীব্র মাত্রায় সংক্রমিতদের শনাক্ত করা, দীর্ঘ সময়ের কোয়ারেন্টিন জারি রাখা, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত শাটডাউনের শিকার আটকা পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য হাজারো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং খাদ্য সংকটে থাকা লাখ লাখ মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করে গোটা ভারতের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কেরালা।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতজুড়ে বড় আকারে শাটডাউন দেওয়ার পরও এর বিস্তার ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। দিন দিন সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ ঘন বসতি এবং স্বল্প স্বাস্থ্য সুরক্ষাজনিত সুবিধাসহ অনেকগুলো কারণে করোনার বিস্তার ঠেকাতে ভারতের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। তবে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও বড় আকারে সামাজিক সমর্থনমূলক যে পদক্ষেপগুলো কেরালা রাজ্যে নেওয়া হয়েছে তা ভারতের বাকি অংশের জন্য মডেল হতে পারে।
কেরালা অনেক বেশি বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে ছিল। কারণ, সেখানে বিদেশ থেকে আসা-যাওয়া করা মানুষের সংখ্যা অনেক। উপকূলীয় এ রাজ্যটিতে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি পর্যটক আসে। রাজ্যটির ৩ কোটি ৩০ লাখ নাগরিকের ছয় ভাগের এক অংশ প্রবাসী। সেখানকার শত শত শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করে। তবে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করতে পেরেছে কেরালা সরকার।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে.কে শাইলাজা বলেন, আমরা সবচেয়ে ভালো কিছুর আশা বুকে বেঁধে রেখেছিলাম ঠিকই, কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারার মতো।
করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর পরই ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে পরিচিত ৯টি দেশ থেকে কেরালায় ফেরা মানুষকে বিমানবন্দরে অনেক কড়াকড়ি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারির পর এসব দেশ থেকে যারা ফিরেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। অথচ গোটা ভারতে এসব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল আরও দুই সপ্তাহ পরে।
পর্যটক ও অন্য নন রেসিডেন্টদের জন্য অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন শেল্টার স্থাপন করেছিল কেরালা। তবে এতো কড়াকড়ির মধ্যেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইতালিফেরত এক দম্পতিকে থামাতে পারেনি তারা। ওই দম্পতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট করেনি। তাদেরকে শনাক্ত করার আগেই তারা বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছিল। তাদের সংস্পর্শে এসে থাকতে পারে এমন ৯০০ মানুষকে শনাক্ত করে আইসোলেশনে পাঠানো হয়।
কেরালায় ৩০ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের কাছে জানতে চাইছেন, শরীরের অবস্থা কী, মনের অবস্থা কেমন, পর্যাপ্ত খাবার তাদেরকে সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা।