দেশটিতে এ ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে নিউ ইয়র্কে। সেখানে ইতোমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ডা. ডেবোরা ব্রিক্স সম্প্রতি আশঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এক লাখ মৃত্যু কিছুতেই এড়াতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। আর সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা না হলে মৃতের সংখ্যা ২২ লাখ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে বিবাদ ও দ্বন্দ্বের আভাস মিলছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। কয়েকটি পদত্যাগ ও বরখাস্তের ঘটনাও দেখা গেছে।
হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা করোনা নিয়ে জানুয়ারি মাসেই সতর্কতামূলক চিঠি দিলেও ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি সেটি দেখেননি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন থেকে যেভাবে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসছে তাতে করোনা মহামারি মোকাবিলায় হোয়াইট হাউসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
করোনাভাইরাসজনিত মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবী মানুষেরা। নতুন করে অনেক মানুষ এখন সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছেন। আপাতত তাদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। সেসব স্থানে লোকজনের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করছে তারা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ৯ এপ্রিল সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে খাদ্য সামগ্রীর জন্য এতো বেশি মানুষ ভিড় জমিয়েছিল যে অপেক্ষমাণ গাড়ির লাইন প্রায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে দেখা গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মধ্য স্যান ফার্নান্দো ভ্যালি অঞ্চলের ভ্যান নুইস এলাকায় দেখা গেছে, বৃষ্টির মধ্যে আবর্জনা ফেলার ব্যাগ গায়ে জড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছে মানুষ।
লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্লুড বলেন, ‘বহু মানুষ নতুন করে খাদ্যাভাবের মধ্যে পড়ছে। তারা জানে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে।’
এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ার হুমকি তৈরি হয়েছে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বহু দেশ লকডাউনে থাকায় সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।
সম্ভাব্য খাদ্য বিপর্যয় নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। নেসলে, ইউনিলিভারের মতো বিভিন্ন কোম্পানি, রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীদের তরফে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড মহামারি বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও মানবিক সংকটে পরিণত হওয়ার আগে সরকার, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।