বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
‘যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সচল করার’ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সহায়তা করবে।
কম ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে চলতি মাসেই লকডাউন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে ট্রাম্পের পরিকল্পনায়। অন্য অঙ্গরাজ্যের বিধিনিষেধও ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট অব্যাহত থাকার মধ্যেই ট্রাম্পের এ প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
তবে ট্রাম্পের নতুন এ নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ বিষয়ক টাস্কফোর্সের সমর্থন রয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ের আগেই এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্যে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৩৩ হাজার।
বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “আমাদের যুদ্ধের পরবর্তী ফ্রন্ট হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রকে খুলে দেওয়া। শাটডাউন দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কোনো সমাধান নয়।”
দীর্ঘমেয়াদী অবরোধ জনস্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন তিনি।
‘পরিস্থিতি অনুমোদন করলে’ সুস্থ নাগরিকদের কাজে ফেরার সুযোগ দেয়া হতে পারে, তবে অঙ্গরাজ্যগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ‘সামাজিক দূরত্ব’ এবং অসুস্থদের ঘরে থাকার নির্দেশনাগুলো চালু রাখতে পারে, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
১৮ পৃষ্ঠার এ পরিকল্পনার প্রথম ধাপে এখনকার বিধিনিষেধের বেশিরভাগই বহাল রাখলেও ‘শারিরীক দূরত্বের নির্দেশনা মেনে’ রেস্তোরাঁ, প্রার্থনালয় ও খেলার মাঠ পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পরিমাণ ফের বাড়ার ইঙ্গিত না পাওয়া গেলে রাজ্যগুলি দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করতে পারবে। এ পর্বে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ‘স্থান অনুপাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক ঢোকার শর্তে’ বার খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে দূরত্ব বজায় রেখে মানুষে মানুষে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া হবে, তুলে নেওয়া হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সীমিত কর্মীসংখ্যা রাখার বিধিনিষেধও। হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোতে ভর্তি থাকাদের দেখতে আত্মীয় স্বজনকে ঢোকার অনুমতি এবং বারগুলোতে লোকজনের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগও মিলবে।
প্রতিটি ধাপের মেয়াদ হতে হবে ন্যূনতম ১৪ দিন; এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে রাজ্যগুলো ধাপের মেয়াদ বাড়াতে কিংবা নতুন স্তরে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় বেশকিছু অঙ্গরাজ্য এক মাসের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ড. ডেবোরাহ বার্ক্স পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অঙ্গরাজ্যগুলোর একটার পর একটা ধাপ অতিক্রমের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীসংখ্যাও বাড়তে থাকবে, বলেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উন্মোচনের আগে ট্রাম্প তার প্রস্তাবনা নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
“আপনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারাই এটি পরিচালনা করবেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো,” বলেছেন তিনি।
এর আগে বুধবার হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, দেশের ২৪ শতাংশ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক অঙ্গরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারের নিচে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে ১ মে দেশজুড়ে শাটডাউন তুলে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল; কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য মে-র আগেই লকডাউন তুলতে পারবে বলে ধারণা দিয়েছিল তারা।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের প্রস্তাবনার পর শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতা ন্যান্সি পেলোসি শাটডাউন তোলার এ পরিকল্পনাকে ‘অস্পষ্ট ও বেমানান’ বলে অভিহিত করেছেন।
কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের পাশাপাশি অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও অর্থনীতি সচলের পদক্ষেপ কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো তার অঙ্গরাজ্যে বাসিন্দাদের ঘরবন্দি থাকার নির্দেশনা ১৫ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন।