এ মাইলফলক অর্জন সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন: “ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা মানুষদেরকে ব্র্যাক ব্যাংক আনুষ্ঠানিক আর্থিক কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিংয়ের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে ভূমিকা পালন করছে এজেন্ট ব্যাংকিং।”
এছাড়াও তিনি বলেন: “বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ-সহ ডিজিটাল ক্ষমতাসম্পন্ন আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলো গ্রাহকদেরকে সেবা দেয় যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গায়। এজেন্ট ব্যাংকিং উত্তরোত্তর নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে এবং অর্থনীতি বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আগামী বছরগুলোতে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।”
জানা যায়, অ্যাকাউন্ট খোলা, নগদ জমা ও উত্তোলন, ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা গ্রহণ, ইউটিলিটি বিল প্রদান সহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারে দৈনন্দিন ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় অবস্থিত হওয়ায় ও বিভিন্ন ধরনের সেবার পাবার সুবিধা থাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট আর্থিক লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ব্যাংকের শাখায় যেসব সেবা পাওয়া যায় এর সবই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে পাওয়া যায়। এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলোতে ডিপিএস, এফডিআর, ডেবিট কার্ড আর চেক বুক উঠানো, সরকারি ভাতা উঠানো, বীমা প্রিমিয়াম ও টিউশন ফি প্রদান সহ যাবতীয় সব সেবা পাওয়া যায়।
চলতি বছরের মধ্যে ৭০০টি এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১,২০০টি আউটলেট চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মূলধারার ব্যাংকিং সেবা বহির্ভূত মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ব্যাংকটি।
গ্রামীণ এলাকায় ৭৭ শতাংশ আউটলেট নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রামীণ এলাকায় সেবার বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১.১৮ লাখ গ্রাহককে সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে, ৫৩৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে, ২,৫৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, ঋণ পরিশোধের ৫,০০০ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে, ৮২১ কোটি টাকা বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রসেস করেছে এবং সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।
‘এজেন্ট অ্যাপ’ এর মাধ্যমে এজেন্ট পার্টনাররা/স্টাফরা আউটলেটের বাইরেও গ্রাহকের ঘরে ঘরে গিয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে পারছেন, যা এ ইন্ডাস্ট্রিতে ব্র্যাক ব্যাংককে অন্যদের থেকে এগিয়ে রেখেছে। এজেন্ট পয়েন্টে টাকা জমা দেয়া মাত্র তা অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং তা ৩৭৫টি এটিএম, ১৮৭টি শাখা ও ইন্টারন্টে ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’এর সাহায্যে তোলা যায়। শাখায় যেসব গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তারা বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন্স সম্পন্ন করে এজেন্ট আউটলেটেও সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
দেশের অর্থনীতিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ইতিবাচক প্রভাব ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বোচ্চ ব্যবসা অর্জনকারী এজেন্ট পার্টনারের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। মীরসরাইয়ের বাড়ইয়েরহাট এজেন্ট আউলেটের স্বত্ত্বাধিকারী মো: আশরাফ উদ্দীন বলেন, “আমরা এলাকার অনেক মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এখন সাধারণ মানুষ বাড়িতে নগদ টাকা রাখার চেয়ে ব্যাংকে রাখা শুরু করেছেন। কেননা তারা এখন বিশ্বাস করছেন, ব্যাংকে টাকা জমা রাখা অনেক বেশি নিরাপদ ও তা দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা নিয়ে আসে। আমার আউটলেটে দৈনন্দিন ব্যাংকিং সেবার বাইরেও তাদেরকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হয়।”