গত বছরের অক্টোবরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এরপর এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের ১৬৩ দেশে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ছিল এই ভ্যারিয়েন্টটি। প্রথমে করোনার ‘ভারতীয় ধরন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ভ্যারিয়েন্টটি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নামকরণের ব্যাপারে আপত্তি জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে একে ‘ডেল্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ওয়ার্ল্ডও মিটারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের পহেলা নভেম্বর থেকে চলতি বছরের পহেলা ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে দুই কোটি ৬৫ লাখের বেশি মানুষ ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ৮ মে দেশটিতে একদিনে চার লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। গত ১৯ এপ্রিল রাজধানী দিল্লিতে এক দিনে ২৮ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন। পুরো ভারতের অবস্থা তখন শোচনীয় হয়ে পড়ে। হাসপাতালে জায়গা নেই, অক্সিজেন নেই, ওষুধের দাম আকাশ ছোঁয়া। এমনকি মৃতদেহ সৎকার করতে ছিল লম্বা লাইন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারের গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখা গেছে।
একই সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ডেল্টার সংক্রমণ রীতিমতো ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে। আগস্টে ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় মৃত্যু এক লাখ ছাড়ায়। হাসপাতালে বেড না থাকায় রোগীদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ডেল্টার কারণেই মে মাসে নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় নেপালে। মে মাস থেকে সেদেশে এত দ্রুতহারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ চরমে পৌঁছে।
ওয়ার্ল্ডও মিটারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের পহেলা নভেম্বর থেকে চলতি বছরের পহেলা ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে ২১ কোটি ৬১ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়। যাদের সিংহভাগই ডেল্টার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত নভেম্বরে জানিয়েছিল, তারা ৬০ দিনে ৯ লাখ করোনা আক্রান্তের ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশই ডেল্টার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যখন এশিয়ার দেশগুলোতে দাপট চালাচ্ছিল তখন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল আলফা। গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে এটি প্রথম শনাক্ত হয়।
জার্মান সংস্থা স্ট্যাটিস্টার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় দ্রুত আলফার সংক্রমণ ঘটে। এই সময়ের মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৬, যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮১১, জার্মানিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৫৫ এবং সুইডেনে ৬৮ হাজার ৪৮৫ মানুষ আলফা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত। সব মিলিয়ে দুটি অঞ্চলের প্রায় ১১ লাখ মানুষ আলফা ভ্যারিরেন্টের সংক্রমণের শিকার হন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বব্যাপী করোনার টিকা ব্যাপক হারে দেওয়া শুরু হয়। সংক্রমণের হারও ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল বিশ্ববাসী। তবে গত ২৪ নভেম্বর সেই স্বস্তিকে অস্বস্তিতে রূপ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই দিন দেশটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্তের খবর দেয়।
সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে একাধিক দেশ এর জেরে ফের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে ওমিক্রনকে ঠেকানো যায়নি এবং যাচ্ছে না। মাত্র একমাসেই ১০৮ দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস গেব্রিয়াসাস আধানম সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী হার দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই বিপুল সংক্রমণ ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দশা তৈরি হচ্ছে।’