আটাব নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। এর প্রভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক ভিত ধসে পড়ার সাথে সাথে সব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে খাতের সাথে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সি, হজ ও ওমরাহ, ট্যুর অপারেটর, ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড ট্যুরিজম, ডোমেস্টিক ট্যুরিজম, হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, টুরিস্ট ভিসা, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি পরিচালনা সার্ভিস চার্জ প্রদান ও স্টাফদের বেতন ভাতাদি দেয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়িত প্রতিষ্ঠান চরম সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে।প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে।
আটাবের সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম গত ১৩ এপ্রিল দেশের ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্পকে রক্ষা করতে অর্থমন্ত্রীকে দেয়া এক চিঠিতে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে এ শিল্পকে বাঁচাতে নগদ প্রণোদনাসহ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণের ওই দাবি জানান।
অর্থমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, আটাব সরকার নিবন্ধিত ৩ হাজার ৫০০ ট্রাভেল এজেন্সির একটি বাণিজ্যিক সংগঠন। আটাব তার সদস্যদের কল্যাণে পাশাপাশি দেশের পর্যটন খাত উন্নয়নে কাজ করছে এবং এর সদস্যদের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্প খাতে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশ যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের বিপুল পরিমাণ টাকা বিনা মাশুলে সরকারকে আদায় করে দিচ্ছে বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।
'করোনাভাইরাসের প্রভাবে ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্পের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এয়ারলাইন্সের ইস্যু করা টিকিটের মূল্য ইন্টারনেশনাল এয়ার ট্রানস্পর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) বিএসপি লিংকের মাধ্যমে ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক পাক্ষিকভাবে পরিশোধের সময় নিকটবর্তী কিন্তু পরিস্থিতি এমনই সময়, যে সময়ে বিএসপি পেমেন্ট পরিশোধ করা অসম্ভব।
ফলে তারা আইএটিএর ডিফল্ট হয়ে যাওয়ার হুমকির সম্মুখীন। আইএটিএর ডিফল্টার হয়ে গেলে এজেন্সিগুলো তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। যার ফলে লাখ লাখ মানুষ মুহূর্তে কর্মহীন হয়ে পড়বে।'
চিঠিতে আরও বলা হয়, করোনার প্রভাবে জুন পর্যন্ত ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্প খাতে সম্মিলিতভাবে প্রাক্কলিত ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা এবং এ সময় প্রায় ৪ লাখ লোকের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, শুধু ট্রাভেল এজেন্সি খাতে করোনার প্রভাবে প্রাক্কলিত ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে আনুমানিক ৫ হাজার কোটি টাকা।
'দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ প্যাকেজ বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র পর্যায়ের বিভিন্ন উদ্যোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্প যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ ভীষণভাবে প্রয়োজন। অন্যথায় আকাশপথে যাত্রী পরিবহন কার্যক্রম ব্যাঘাত ঘটবে। তাই এ প্যাকেজের আওতায় প্রণোদনা প্রদানের খাত হিসেবে 'ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্পকে' অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য।'
চিঠিতে বলা হয় 'ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্পে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি অফিস পরিচালনা বাবদ সব খরচ বহন করতে হচ্ছে। এ শিল্পে নিয়োজিত ৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতাদি প্রদান ও তাদের ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান বহাল রাখতে এবং অফিস পরিচালনা চলমান রাখার জন্য নগদ ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করা প্রয়োজন।'
'এ ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত খাতগুলোয় ব্যবসায়িক সব কর্মকাণ্ড যেহেতু স্থবির হয়ে পড়েছে এবং আগামী জুন মাস পর্যন্ত এ পরিস্থিতি চলমান থাকতে পারে। এ কারণে এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত খাতের ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ ১ এর আওতাভুক্ত করে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন', - উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।