কঠিন এই বাস্তবতায় এখন আর শুধু সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি সেনারা। করোনা জীবাণুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অশান্ত ও অস্থির সময়ে প্রতিনিয়তই স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর সদস্যরা।
দিন যত গড়াচ্ছে তাদের কাজের স্টাইলও বদলে যাচ্ছে। কোনো জনসমাগম নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গৃহবন্দি জীবনযাপনের শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়াটাই এখন তাদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’।
অদৃশ্য জীবাণু করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের পাশাপাশি মানবতার পক্ষের লড়াইয়েও নিজেদের অবতীর্ণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়ে দেশের ৬২টি জেলাতেই কর্মহীন গরিব ও দুস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে নিত্যপণ্য বিতরণের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হুড়োহুড়ি বা শোডাউন প্রবণতার বাইরে গিয়ে তারা গরিব ও দুস্থদের ত্রাণের প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। কোথাও কোথাও আবার নীরবে-নিভৃতে, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে। কখনও কখনও টহলের গাড়িতে থাকা ত্রাণসামগ্রী দারিদ্র্যজর্জর মানুষজনকে সড়কেই দেয়া হচ্ছে তুলে। দারিদ্র্যজর্জর জীবনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন নিুবিত্ত আর কর্মহীনরা।
আর এসব খরচাপাতি হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে; নিজেদের জন্য বরাদ্দ রেশনের টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে থাকার সরকারি উদ্যোগে নিজেদের সহযাত্রী হিসেবে মানবিক নৈতিকতার মনোভাব নিয়ে পথচলার অঙ্গীকার করেছেন দেশপ্রেমিক অকুতোভয় সেনারা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার সংগ্রামের মূল চেতনাকে ধারণ করে পথচলা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
অমিত দৃঢ়তায় তিনি উচ্চারণ করেছেন- ‘আমরা সৈনিক, আমরা সব সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’ মাঠে থাকা সেনাসদস্যদের কার্যক্রম, রীতিনীতি এবং কঠোর মানসিকতার অগ্নিদেয়ালের পরিবর্তে মানবিক সারসত্যের নিগূঢ়তম বাস্তবতায় নিজেদের সমর্পণের ১৬ দফা কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
জাতির সংকটময় মুহূর্তে নিজেদের পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আপামর মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধানের এ নির্দেশনায় করোনার মহাপ্রলয়ের সময়েও নির্ভীক সেনাসদস্যরা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।
নিজেদের জীবন বিপন্ন করে রাতদিন সড়কে সড়কে টহল দিচ্ছে। দেশপ্রেম, আবেগ ও মানবিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য তাদের এমন প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা শুধু নজরকাড়াই নয়, মুগ্ধতার শৌর্য-বীর্য আর বীরত্বের বহিঃপ্রকাশও বটে!
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রেও তারা অটল ও অবিচল। দেশের প্রতিটি দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের অভিজ্ঞতা ও কৃতিত্ব রয়েছে।
করোনা ঠেকাতে তাদের অংশগ্রহণ সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে শত বিরূপতার মধ্যেও সাফল্য তাদের ললাট চুম্বন করেছে। সংগ্রামের সমুদ্র বেয়ে তারা বয়ে এনেছেন অর্জনের মণিমাণিক্য।
করোনা প্রতিরোধের সতর্কতামূলক কার্যক্রমকে জোরদার করার পাশাপাশি দেশপ্রেম আর মানবিকবোধ থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেরা বিনামূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন। স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমেই কেন্দ্র থেকে প্রান্ত তৃণমূলের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রীতিমতো সম্পৃক্ত হয়েছেন ভাব-ভালোবাসার অচ্ছেদ্য বন্ধনে। বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে একেকজন সেনাসদস্য যেন হয়ে উঠেছেন আলোর পথের যাত্রী।