ফরিদপুরের বাজারগুলোতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের নতুন ফলন ওঠার আগ দিয়ে হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। এ সময়ে আবারো পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ফরিদপুরে ক্রেতাদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন পেঁয়াজ চাষি ও কৃষকরা।
তাদের আশঙ্কা, এই মুহূর্তে যখন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই, তখন এই বর্ধিত মূল্যের মুনাফা হাতিয়ে নেবে মধ্যসত্ত্বভোগী মজুতদারেরা। অন্যদিকে মাসখানেক পরে যখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠবে তখন ফের দর পতন হবে পেঁয়াজের। এতে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে সাধারণ ক্রেতাদের যেমন অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে, তেমনি লাভের আশায় যারা পেঁয়াজ চাষ করছেন তাদেরও লোকসান গুনতে হবে। ফরিদপুরের নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে এ তথ্য।
ফরিদপুর সদরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় মোকাম মোমিনখাঁর হাটে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। আর পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। বর্তমানে এই হাটে নতুন পেঁয়াজ ৩২০০ টাকা ও পুরাতন পেঁয়াজ ৪০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, একদিকে টানা অবরোধ আরেকদিকে বৃষ্টির সঙ্গে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দ্রুতই বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণার পর ফরিদপুরে পেঁয়াজের পাইকার বাজারগুলোতে দফায় দফায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। গতবছর এই পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে ২৪০ টাকাও উঠেছিল এককেজি পেঁয়াজের দাম।
তবে পেঁয়াজের এই দাম বৃদ্ধিতে হাসি নেই পেঁয়াজ চাষি ও কৃষকের মুখে। কারণ মৌসুম শেষে বেশিদিন তারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না বলে বিক্রি করে দেন মজুতদারদের কাছে। আর এখন পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পুরো লাভ হাতিয়ে নিচ্ছে এই মজুতদারেরা। চড়ামূল্যে পেঁয়াজ কিনে বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের।
কয়েকজন কৃষক বলেন, আর মাত্র মাসখানেকের মধ্যেই বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠবে। তার আগেই বাজারে এখন ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ নতুন পেঁয়াজ উঠলে তা দুই হাজার টাকাতেও বিক্রি হবে না।
তাদের দাবি, কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ প্রতি দাম পেলেও তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন তখন। কিন্তু তখন সেটি পাবেন কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান। ফলে মৌসুমের এই পর্যায়ে এসে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকদের মনে বিরাজ করছে লোকসানের শঙ্কা।
অপরদিকে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, বছরের একটি সময় আসলেই অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। সেই অস্থিরতাকে পুঁজি করে লাভবান হয় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যার ফলে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বারবার মার খাচ্ছে কৃষকেরা। কৃষক ও কৃষির স্বার্থেই বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকারের কাছে তাদের দাবি এই সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
ফরিদপুরের জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সরেজমিনে ফরিদপুরের মুড়িকাটা পেঁয়াজের বড় মোকাম মোমিনখাঁর হাটে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে অল্পকিছু মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।