ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কা চার সড়কে

ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কা চার সড়কে
গত দুই বছর ঈদ আনন্দে বড় বাধা ছিলো মহামারি করোনাভাইরাস। একদিকে করোনার চোখ রাঙানি, অন্যদিকে সরকারের বিধিনিষেধে ঈদ কেটেছে অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে। ঈদযাত্রায় ভোগান্তি না থাকলেও বিধিনিষেধের বেড়াজালে নৌরুটে ঘটেছে প্রাণহানি। এবার সামগ্রিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে বলে ধারণা সবার।

চিন্তা বাড়াচ্ছে সড়ক ও ফেরি পারাপারের ভোগান্তি। ঢাকা থেকে বের হওয়ার একটি রুট গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় চলছে উন্নয়ন কাজ। বাড়তি মানুষের চাপ আর সেসব উন্নয়ন প্রকল্প মিলিয়ে সড়ক ও নৌপথের কিছু স্থানে তৈরি হতে পারে অচলাবস্থা। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেসব পয়েন্টে ঘরমুখী মানুষকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যেসব সড়কে বাড়তি ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার সড়ক। এ পথে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। শঙ্কা রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ বাইপাস পর্যন্ত সড়ক নিয়ে। সেখানে চলছে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনের কাজ। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি অংশ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং নৌপথের মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

ভোগান্তি বাড়বে ঢাকা-গাজীপুর চৌরাস্তা সড়কে

আরামদায়ক, ব্যয় সাশ্রয়ী ও নিরাপদ নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গাজীপুর-টঙ্গী-উত্তরা-বিমানবন্দর করিডোরে ২০ কিলোমিটার বিআরটি লাইন নির্মাণের কাজ চলমান। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে দফায় দফায়। সবশেষ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত সড়কের সিভিল ওয়ার্কের অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ। বারবার প্রকল্পটির অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়েই এ পথ পার হতে লেগে যায় তিন-চার ঘণ্টা বা তারও বেশি সময়। ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার অন্যতম এ রুট নিঃসন্দেহে ঈদের সময় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। যদিও ঈদের আগেই সড়কটি ভালো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, আমাদের বর্তমান উদ্যোগ ঈদ সামনে রেখে। বিআরটি রুট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সড়কের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। সেজন্য আমরা কংক্রিটের সড়ক তৈরি করছি। ঈদের আগেই এ কাজ শেষ হবে। চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা করা হচ্ছে। আশা করি উত্তরা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক ভালো থাকবে, প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। তারপরও ঈদের সময় অনেক গাড়ি চলাচল করবে। তখন একটু সমস্যা হবেই।

স্বস্তি নেই ঢাকা-ময়মনসিংহের সড়কেও

ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের ঈদে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশেও সংস্কার চলছে। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলাভিত্তিক অনেক সড়কে যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজির কারণে সৃষ্ট যানজট ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের কাজ চলমান। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে রূপ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।

সড়ক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে এই রুটে দৈনিক ১১ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে তা অন্তত তিনগুণ বাড়তে পারে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে।

প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান  বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এই সড়কে বর্তমানে দৈনিক ১১ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদে এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা তিনগুণ হবে। ফলে মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা আছে। মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় সমস্যা হবে আমাদের জানা আছে। সেজন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের দুটি ব্রিজ, নলকা ও চান্দাইকোনা খুলে দেওয়া হবে। হাটিকুমরুলে যানবাহনের চাপ থাকে বেশি। সেজন্য এটাও চওড়া করা হচ্ছে।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে ঈদেও চলবে না বাস-ট্রাক

২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট বেশ কয়েকবার পদ্মা সেতুতে ধাক্কা দেয় ফেরি। এরপর থেকে গত প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ফেরিতে করে বাস-ট্রাক পারাপার। ঈদেও এই নৌপথে চলবে না বাস-ট্রাকবাহী ফেরি। ফলে ঘরমুখো মানুষ পড়বেন ভোগান্তিতে। বর্তমানে এই রুটে চলা ছয়টি ফেরিতে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও ছোট কার চলাচল করে। ঈদে আরও তিনটি মাঝারি ফেরি এ ঘাটে আসতে পারে। ফলে মোট ৯টি ফেরি চলাচল করলেও এই রুটের বাসের যাত্রীদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট দিয়ে ঘুরে আসতে হবে।

গত বছর ঈদুল ফিতরে ‘শিথিল বিধিনিষেধের’ মধ্যেও ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ ছিল। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথেই ফেরিতে ভিড়ের কারণে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়।

শিমুলিয়া ঘাটের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ রুটে ঈদেও বাস-ট্রাক চলবে না। তবে মাইক্রোবাস ও ছোট যানবাহন চলাচল করবে। বর্তমানে এই রুটে ছয়টি ফেরি চলাচল করে। ঈদে আরও তিনটি ফেরি যোগ হবে। তারপরও ঈদে এই ফেরি দিয়ে চাপ সামলানো মুশকিল হবে।

বাড়তি চাপ সামলাতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ২১ ফেরি

রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ ঈদে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে পদ্মা পাড়ি দেবেন। ঈদযাত্রায় মানুষের ঢল সামাল দিতে ২১টি ফেরি সব সময় চলাচল করবে পাঁচটি ঘাটে। ফলে দৈনিক ১১ হাজার যানবাহন পারাপারের সক্ষমতা তৈরি হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

আরিচা-দৌলতদিয়া ঘাটের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খালেদ নেওয়াজ (কমার্শিয়াল) বলেন, ঈদে সব সময় আরিচা-দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি। বর্তমানে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে, ঈদে আরও দুটি বাড়বে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঈদের আগে ট্রাক চলাচল করবে না। সেই হিসেবে আমরা ঈদের সময় দৈনিক ১১ হাজার বাস ও মাইক্রোবাস পারাপার করতে পারবো। আশা করছি চাপ সামলাতে পারবো।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেঁয়াজের দামে শঙ্কায় কৃষক, ক্ষুব্ধ ক্রেতা
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি বন্ধ
তিনদিন সেন্টমার্টিনের হোটেল-মোটেল বন্ধ
চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাবের নতুন প্রেসিডেন্ট বাবলু
স্থলবন্দর এলাকায় মর্টারশেল, ধ্বংস করলো সেনাবাহিনী
রংপুরের তারাগঞ্জ সভাস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল শুরু
ময়মনসিংহে মালবাহী ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৪
এক জালে ১৫৯ পোপা মাছ, দাম হাঁকছেন ২ কোটি
রেললাইনের ক্লিপ খুলে নিলো দুর্বৃত্তরা, অল্পের জন্য রক্ষা