চলতি সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এতে ঈদ বাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহন বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ফ্লিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, সব পথের প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেছেন, করোনাকালেও ৬০ লাখ মানুষ ঈদযাত্রা করেছেন। কিন্তু এবার প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। তবে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ মানুষের। ১৬ লাখের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই চাপ কমাতে ও ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, শেষ দিকে সবাই বাড়ি না গিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু হলে সেখানে একটা ব্যবস্থাপনা হবে। এছাড়া দেশে বর্তমানে বাসে আট লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ ও মোটরযানে চার লাখ মানুষের যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। বাকি মানুষ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেন, লঞ্চের ছাদে করে যাবে। সক্ষমতার বাহিরে যখন চাহিদা চলে যাবে সড়ক ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে।
এমন আশঙ্কার মধ্যে ঈদযাত্রা কেমন হচ্ছে তা জানতে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গত দুই বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রায় ভিড় বেড়েছে। ঈদের ছুটি শুরুর আগে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কমলাপুরে আসা এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তেমনই একজন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বাড়িতে যাওয়ার জন্য আজ (শুক্রবার) রওনা দিচ্ছেন তিনি।
এতো আগে বাড়ি যাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা না নেই। ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে আগেই বাড়ি যাচ্ছি। এখন একটু চাপ কম। অফিস ছুটি শুরু হলে প্রচুর ভিড় হবে।
ঈদে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী ও শিশুরা। ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠা ও দীর্ঘ ভ্রমণে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। এজন্য ভোগান্তি এড়াতে অনেক নারীরা শিশুদের নিযে আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা মরিয়ম আক্তার বলেন, আমার ছোট বাচ্চা আছে, তাই আগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঈদের আগে বাচ্চা নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। বাচ্চার বাবার অফিস আছে তাই সে পড়ে যাবে। আমি বাচ্চাকে নিয়ে আগে চলে যাচ্ছি। যেন বাচ্চার কষ্ট না হয়।
অন্যদিকে, অনেকেই আবার জরুরি প্রয়োজনেও বাড়ি যাচ্ছেন। কয়েকদিন পর যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ঈদের ছুটি নিয়ে আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। মো. আমান উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি বলেন, কয়েকদিন পরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাড়িতে সমস্যা থাকার কারণে আগেই চলে যাচ্ছি। তবে এখন তেমন ভিড় নেই।
ঈদ যাত্রায় মানুষের চাপ শুরু হবে আর কয়েকদিন পর। আর এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অগ্রিম টিকেট বিক্রি। এতে প্রতিদিন সকালেই ট্রেনের কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনলাইনে টিকেট কেনার বিড়ম্বনার পাশাপাশি স্টেশনে এসে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। এতে রেল কর্তৃপক্ষের ঈদ যাত্রার প্রস্তুতি প্রশ্নবিদ্ধ।
এসব বিষয়ে জানতে শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অফিসে গিয়ে স্টেশন ম্যানেজার বা স্টেশন মাস্টারকে পাওয়া যায়নি।
এবার ঈদে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই যাত্রায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করেন ট্রেনে। ফলে প্রতিবছরই ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।