৩৩ মাস পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় ওবায়দুল কাদের

৩৩ মাস পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় ওবায়দুল কাদের
দীর্ঘ ৩৩ মাস পর নিজ নির্বচানী এলাকায় গেলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তার আগমনকে ঘিরে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দীর্ঘ অসুস্থতা ও আওয়ামী লীগের গৃহবিবাদের কারণে গত ৩৩ মাস তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট উপজেলা) আসেননি ওবায়দুল কাদের। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপন করতে তিনি নিজ বাড়িতে আসেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ঢাকার সরকারী বাসভবন থেকে রওনা হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের বড় রাজাপুর নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে বাবা-মার কবর জিয়ারত করেন সেতুমন্ত্রী।

এরপর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।তারপর নিজ বাড়ির দরজায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন তারই ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা।

বিকালে কবিরহাট জিরো পয়েন্টে এলাকাবাসীর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ওবায়দুল কাদের। বিকেল ৪টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথেও তিনি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপই মন্ত্রীকে বরণ করে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এদিকে গত দেড় বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গেছে। তবে তার এ সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক সচেতন মহল। এখন দেখার বিষয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী রাজনীতির রাজনীতিতে এবার জোড়া লাগবে কি?

কাদের মির্জা সমর্থিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন,কয়েক বছর পর নেতার কোম্পানীগঞ্জে আগমনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।

সেতুমন্ত্রীর ভাগনে ফখরুল ইসলাম রাহাত বলেন, কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে বর্তমানে নানা রকম প্রেক্ষাপটে মন্ত্রীর উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা ভালোমতো অনুভূত হচ্ছে। মন্ত্রীর আগমনে নেতাকর্মীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয় লোকজন আশা করছে কোম্পানীগঞ্জের যে রাজনৈতিক সমস্যা, তা সমাধান হবে।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, সেতুমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বাড়ির সামনে গার্ড অব অনার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ মঞ্চস্থল পরিদর্শন করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর নানা ঘটনায় সমালোচনায় পড়তে হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে। আলোচনার সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। কাদের মির্জার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে সংগঠনের ভেতর থেকেই।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বার বার নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সংগঠন পড়েছে নাজুক অবস্থায়।

স্থানীয় রাজনীতিতে তার বিরোধী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। তার মূলত খুঁটি হচ্ছে কাদের মির্জার আপন তিন ভাগনে। বাদল ও ভাগনেদের বিরুদ্ধেও কাদের মির্জা মোটা দাগে নানা অভিযোগ তুলেন।

একপর্যায়ে দুই গ্রুপের এ দ্বন্দ্ব সংঘাতে কাদের মির্জার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তারই আপন তিন ভাগনে। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, ও ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সিরাজিস সালেকিন রিমন। তিন ভাগনে কাদের মির্জার ৪৮ বছরের রাজনীতির ক্যারিয়ারকে টেক্কা দিতে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দেয় তার প্রতিপক্ষ গ্রুপকে। এক পর্যায়ে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ শিবিরের আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় তারা।

উল্লেখ্য,বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এর আগে নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-অসংগতি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে কোম্পানিগঞ্জসহ সারা দেশে আলোচিত হন।

বসুর হাট পৌর নির্বাচনের আগে প্রচারণায় আবদুল কাদের মির্জার যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, তিনি তাতে বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর তিন-চারটি আসন বাদে তাদের অন্য এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও তিনি অনেক খোলামেলা বক্তব্য দেন দীর্ঘ সময়। কাদের মির্জার বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে।

মূলতঃ কাদের মির্জার পারিবারিক ভুল বুঝাবুঝি সূত্র ধরে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই এই বিরোধের ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতে এ অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছড়িয়ে যায়। সেই বিরোধের জের ধরে গত কয়েকমাসে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে একজন সাংবাদিকসহ দুইজন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী। পাল্টাপাল্টি ৭২টি মামলা হয়। এতে আসামি হয় উভয় পক্ষের প্রায় সাত হাজার তৃণমূলের নেতাকর্মী। এখনো বাড়ি ছাড়া রয়েছে হাজার দেড়েক নেতাকর্মী।

ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে অনেকে বাড়ি আসতে পারেনি পুলিশের ভয়ে। তৃণমূলের কর্মীরা আশা করছে এ কোন্দল নিরসন হলে তারা আগের মতো চলাফেরা করতে পারেব। এখন তাদের ভরসার স্হলে একমাস ওবায়দুল কাদের।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু