এদিকে অব্যাহত এ পতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অস্বস্তি বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি অনাস্থা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
ঈদুল ফিতরের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৫ মে। ১৮ তারিখ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৯ দিন, যার মধ্যে ৭ দিনই পতন হয়েছে সূচকের। ৫ মে লেনদেন শুরুর প্রথম দিনই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ১২ পয়েন্ট হারায়। পরের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর ৮ মে ২৬ পয়েন্ট বাড়ে সূচকটি। ৯ মে আবারও সূচক ২৮ পয়েন্ট বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলে। তবে ১০ মে সূচক ৩২ পয়েন্ট কমায় সে স্বস্তি টেকেনি, বরং হতাশা আরও বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। কারণ ১১ মে সূচকের বড় পতন আবারও অস্বস্তিতে ফেলে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের। সেদিন ‘ডিএসই এক্স’ হারায় ৭৩ পয়েন্ট।
১০ মে থেকে আজ (১৮ মে) পর্যন্ত টানা ৬ কার্যদিবসেই পতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে ১৬ মে সর্বোচ্চ ১৩৪ পয়েন্ট হারিয়েছে ডিএসই’র প্রধান সূচক। ১৭ , মে ২৭ পয়েন্ট এবং আজ ৯৩ পয়েন্টের পতন হয় প্রধান শেয়ারবাজারে।
ঈদের পরের ৯ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিন হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। আর হাজার কোটির নিচে লেনদেন হয়েছে পাঁচ দিন। এর মধ্যে ৫ মে লেনদেন হয় ৫০০ কোটি টাকারও কম।
ডিএসইর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯ মে ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, ১০ মে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, ১১ মে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা এবং ১৬ মে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে শেয়ারবাজারে। আর হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে পাঁচ দিন। এর মধ্যে ৫ মে লেনদেন হয় মাত্র ৪৬৮ কোটি টাকা।
টানা পতনের কারণে অস্বস্তিতে থাকা বিনিয়োগকারীরা বলছেন পুণরায় ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দর) নির্ধারণ করতে। আর বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ডিলার, আইসিবি, বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
অব্যাহত এই পতনকে স্বাভাবিকই মনে করেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। অর্থসংবাদকে তিনি বলেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ সারা পৃথিবীতে ইক্যুইটি মার্কেট, স্টক মার্কেট বসে গেছে। বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য তো আরও ভিন্ন। আমাদের দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশই ট্রেডার (নিয়মিত শেয়ার বিক্রেতা), ইনভেস্টর (বিনিয়োগকারী) কম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনেন। যার কারণে তাদের দুই/আড়াই বছর বা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের কথা বললেও তাঁরা তা শুনতে চায় না।
শেয়ারবাজারের এই বিশ্লেষক আরও বলেন, কেউ তো বাজারকে টাকা দিচ্ছে না। আইসিবি নিজেই দেউলিয়া, তারা কিভাবে বাজারকে সাপোর্ট দিবে? আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজমেন্টের কাছে টাকা থাকলেও তারা কিভাবে কি করছে তা জানা মুশকিল। প্রত্যেকেই তো বাজার থেকে সুবিধা নিতে চায়, কেউ সাপোর্ট দিয়ে বাজারকে টেনে তুলবে এটা আশা করা যায় না।
সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এবং শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর মতে- শেয়ারবাজারের উন্নতির জন্য বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিবিকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মার্কেট নিয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, মার্কেট নিয়ে বেশ কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। এসব গুজব বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক নিকট অতীতে যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলো বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে। যেমন-ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্রোকারেজ হাউজ, লিজিং কোম্পানি, আইসিবির কাজ হচ্ছে মার্কেট যখনই খারাপ হবে তখনই এসব প্রতিষ্ঠান বাজারকে সাপোর্ট দেবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সম্প্রতি, যা মার্কেট এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী। এজন্য বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিবিকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী মনে করেন বাজার ভালো করতে ফ্লোর প্রাইসের বিকল্প নেই। অর্থসংবাদকে তিনি বলেন, বাজারের অবস্থা ভালো করতে পুণরায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে বাজারের অবস্থা ভালো হবে, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেনি বা ছাড়েনি, তাদেরকে শেয়ার কেনা-বেচা করতে হবে। যে পরিমাণে প্রিমিয়াম তারা বাজার থেকে উত্তোলন করেছে, সেই পরিমাণ দরেই শেয়ার কিনতে হবে।