বিদায়ী ২০২৩ সালে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন কমেছে। বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন পায় মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ বছরে মুল মার্কেটে আসার জন্য অনুমোদন পায় ৫টি কোম্পানি। যা গত ২০২২ সালে ছিলো ৮টি। আর পুঁজিবাজারে এসএমই মার্কেটে (স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর প্লাটফর্ম) ২০২২ সালে অনুমোদন পেয়েছিলো ৪টি কোম্পানি, সেখানে ২০২৩ সালেও অনুমোদন পেয়েছে ৪টি কোম্পানি।
বিদায়ী বছরে মূল মার্কেটে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড।
এসএমই প্লাটফর্মে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে- এগ্রো অর্গানিকা পিএলসি, আল মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়েব কোটস পিএলসি এবং এমকে ফুটওয়্যার পিএলসি।
মূল মার্কেটে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে-
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৮৫৩তম কমিশন সভায় বিমা খাতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ১০ টাকা অবিহিত মূল্যের ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। উত্তোলিত অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, মেয়াদি আমানত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিওর ব্যয় বাবদ ব্যবহার করার কথা কোম্পানিটির।
কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড
কমিশনের ৮৮৫তম সভায় কোম্পানির আইপিওর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহীত টাকা দিয়ে কোম্পানিটি বিল্ডিং তৈরী, সিভিল ওয়ার্ক, বিলাসবহুল সংগ্রহ, স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ, বিদ্যমান দায় পরিশোধ এবং আইপিও খরচ বাবাদ এই অর্থ ব্যয় করবে।
কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে শান্তা ইক্যুইটি অ্যান্ড আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেড। কোম্পানিটি এখনো অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড
কমিশনের ৮৮৭তম সভায় ব্যাংকটিকে ১০ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছিলো বিএসইসি। শেয়ারবাজারে থেকে উত্তোলন করা অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করার কথা রয়েছে ব্যাংকটির।
আইপিওতে কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
বিএসইসির ৮৮২তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে কোম্পানিটি ১০টাকা মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। যা এখনও চলমান।
উত্তোলিত অর্থ কোম্পানিটি মেয়াদী আমানত রাখা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, ফ্লোর ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যবহার করবে। আইপিওতে কোম্পানিটি ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সোনারবাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি অবলেখকের দায়িত্বও পালন করবে। আর কোম্পানির নিরীক্ষক হিসেবে আছে জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস।
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ
বিএসইসির ৮৮৯তম কমিশন সভায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও অনুমোদনের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি আইপিওতে জনসাধারণের কাছ থেকে আবেদন জমা নেওয়া শুরুর একদিন আগে তা স্থগিত করেছিল বিএসইসি।
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আর এই টাকার বড় অংশ ব্যয় করা হবে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণে।
গত বছরের ৩১ আগস্ট বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন করে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর প্রক্রিয়া অনুসারে কোম্পানিটি এরইমধ্যে যোগ্য তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য নিলাম শেষ করেছে।
তাতে শেয়ারের কাট-অফ মূল্য নির্ধারণ হয় ৫০ টাকায়। কোম্পানিটিকে কাট-অফ মূল্যের চেয়ে ২০ টাকা কমে তথা ৩০ টাকা দামে এই শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
এসএমই প্লাটফর্মে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে-
এমকে ফুটওয়্যার
৮৫৮তম কমিশন সভায় এসএমই মার্কেটে এমকে ফুটওয়্যারের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার (কিউআইও) অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
কোম্পানিটি কিউআইওর মাধ্যমে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনার খরচ খাতে ব্যয় করার কথা কোম্পানিটির।
কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস
কমিশনের ৮৪৫তম কমিশন সভায় এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির জন্য আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের কিউআইও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
কোম্পানিটি ১০ টাকা মূল্যে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করেছে। পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ বিদ্যমান ব্যবসা প্রসারিতকরণ, ঋণ পরিশোধ এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করার কথা রয়েছে আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের।
প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো।
এগ্রো অর্গানিকা পিএলসি
কমিশনের ৮৫৮তম সভায় এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির জন্য এগ্রো অর্গানিকা পিএলসির কিআইও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটি ১০ টাকা মূল্যে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করেছে।
পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করার কথা এগ্রো অর্গানিকা পিএলসির।
কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজম্যান্ট।
ওয়েব কোটস পিএলসি
কমিশনের ৮৯০তম সভায় এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির জন্য ওয়েব কোটসের কিআইও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটির কিউআইওর মাধ্যমে বাজার থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। বর্তমানে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কোম্পানিটি কিউআইওর মাধ্যমে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে। উত্তোলন করা অর্থ নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, কার্যকরী মূলধন, ঋণ পরিশোধ ও ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করবে।
এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানিটি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না।
কোম্পানিটির ইস্যুব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সোনালী ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।
অর্থসংবাদ/এসএম