রবিবার (২৯ মে) বিএসইসির মাল্টিপার্পাস হল রুমে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেকচার সেশনে তিনি এ কথা বলেন। এতে লেকচার দেন পিকেএসএফএর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিএএসএমের ডিরেক্টর জেনারেল ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী এবং বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, লেবানন শীলঙ্কারও আগে দেউলিয়া হয়েছে। তারা অনেক আগে থেকেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ওই দেশে কোন পাওয়ার প্লান্ট নাই। সেটা কিন্তু কেউ বলে নাই। ওটা নিয়ে কারও কোন ব্যাথ্যা ছিল না। হঠাৎ করে সবার শ্রীলঙ্কার কথা মনে পড়ে গেছে। এরপরে তারা নানা ধরনের গুজব ছড়াতে শুরু করল। আরে আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিলাম। যে সাহায্য দিল, সেই নাকি ওর মতো হয়ে যাচ্ছে। এটা হয় নাকি।
সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে বাংলাদেশকে টেনে আনাকে কেন্দ্র করে তিনি বলেন, অনেকে অর্থনীতি বুঝেও না বুঝার মতো কথা বলেন। তখনই বিষয়টি হয়ে যায় ক্ষতিকর। আমাদের ৫ বছর আগের তুলনায় রেমিটেন্স এখন কত এবং প্রবৃদ্ধি কত।
তিনি আরও বলেন, শ্রীলঙ্কা ২ বিলিয়ন ডলারের সমস্যায় পড়েছে। আর আমরা মাসে শুধু একটা খাত থেকেই ২ বিলিয়ন ডলার পাই। কিন্তু একটি শ্রেণী কোনটার সাথে কোনটার তুলনা করে ভয় দেখিয়ে দেশকে অস্থির করে তুলেছে। এটা আমার বোধগম্য না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের ভয়ের কোন কারন নেই। শুধু স্বপ্ন দেখার অনেক কারন আছে।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে এখনো করোনা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। তবে আল্লাহর রহমতে আমাদের সে অবস্থা নেই। যে কারনে সবাই বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে ঝুঁকছে। এ কারনে জাহাজে কন্টেইনার ভাড়া বেড়ে গেছে। নিশ্চয় চাহিদা বা রপ্তানি বৃদ্ধির কারনে এই ভাড়া বেড়েছে। আগে জাহাজ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ট্রান্সজিট বা নোঙ্গর করতে হতো। কিন্তু এখন সরাসরি ইউরোপে যায়। এর কারন বাংলাদেশ থেকেই জাহাজ পণ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
অন্যদিকে রপ্তানি বৃদ্ধির কারনে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি বেড়েছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমাদেরকে পণ্য রপ্তানির জন্য কাচাঁমাল আমদানি করতে হয়। যে কারনে আমদানিও বেড়েছে। অতএব এক্সপোর্ট বাড়লে ইমপোর্ট বাড়বেই।
তিনি বলেন, যে অর্থনীতির দেশে (বাংলাদেশ) বছরে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেখানে কেনো যে মানুষ ভয় পায়, তা আমি বুঝি না। আমরা রপ্তানির অর্থ বাদই দিলাম, বছরে ২২-২৪ বিলিয়ন ডলারতো পাই। এখান থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধে দিতে পারব না। ধরলাম ৪-৫ বিলিয়ন ডলারই ঋণ পরিশোধে যাবে, তাতে কি আসবে যাবে আমাদের। বরং আমরা যদি হুন্ডি ব্যবসায়ীদেরকে ধরে ফেলতে পারি। তাহলে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার বেচেঁ যাবে। কারন এরাই আমদানি-রপ্তানির সময় ওভারভয়েস-আন্ডারভয়েস এলসি খুলে বিদেশে টাকা পাচাঁর করে।
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এমন একটা দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হল, সেই দেশের কোন কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গম, জব, ভুট্টা জাতীয় পণ্যের যারা অধিকাংশ রপ্তানিকারক, তাদের খাদ্যের উপর যদি আপনি নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে ওইসব দেশের কি অসুবিধা হবে। বরং ওরা আরও বেশি করে খাবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সারাবিশ্বের সাপ্লাইচেইন নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে যেসব দেশে ওইসব পণ্যের সংকট, ওইসব দেশ ভোগান্তিতে পড়বে।
একই ইস্যুতে তিনি বলেন, যে দেশ বিশ্বের বৃহৎ গ্যাস ও তেল রপ্তানিকারক, তাদের উপর যদি নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে তাদের কি হবে। বরং ওরা এখন মাসে ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত আয় করছে। যেহেতু বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে গেছে। সে কারনে তারা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। অতএব আপনি যখন কাউকে শাস্তি দিতে চাইবেন, সেটা যদি শাস্তিদায়ক না হয়ে আরামদায়ক হয় এবং বিশ্ববাসীর জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে সেটা কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কয়লার ব্যবহার ২ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করতে যায়, দেখবেন এমন একটি দেশ এসে বাধাঁ বা নিষেধাজ্ঞা দেবে, যারা ২০ শতাংশ কয়লা ব্যবহার করে। এছাড়া তারাই একে উঠায় নিয়ে যাবে, ওই দেশে বোম্ব মারবে, এতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আমার দেশে র্যাব ২টা দুষ্টু লোককে গুলি করলেই বিপদে পড়ে যেতে হচ্ছে। এই হচ্ছে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতি। সুতরাং আমাদেরকে নিজের পায়ে দাড়াঁতে হবে। এজন্য আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হবে।