গতকাল শনিবার সকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের সামনে সেনাবাহিনীর ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান করেছে জেলার অসহায় সাধারণ মানুষের মাঝে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও সুশৃংখল ভাবে সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্তাবধানে প্রতিদিন চাঁদপুর জেলার বিভিন্নস্থানে সকাল ৮টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে বলে জানান মেডিকেল টিমের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হুদা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কুমিল্লা এরিয়ার এই ভ্রাম্যমান চিকিৎসকদল আটটি দলে ভাগ হয়ে ছয়টি জেলার ২৬ জায়গায় এখন থেকে করোনা মহামারি শেষ হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাব। এর মধ্যে চাঁদপুরে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ডা. আয়েশা সিদ্দিকাসহ ছয়জনের একটি দল কাজ করবেন। এর জন্য আমরা সব ধরনের ওষুধপত্র নিয়ে এসেছি। তবে জটিল কোনো রোগির ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের সহায়তা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে অনেক রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মানুষের ভীতি দূর করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরামর্শপূর্বক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদানসহ তাদের সেবাদানের লক্ষ্যেই আমাদের এই কার্যক্রম। মহামারী দুর্যোগ মুহূর্তে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কুমিল্লা এরিয়ার ৬ টি জেলায় অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে আটটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ৬ টি জেলার যেখানেই আমরা সংবাদ পাবো সেখানে আমরা আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করব। অসহায় দুর্যোগ মুহূর্তে কোন মানুষ যেন চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ না করে সে জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।’
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে চাঁদপুর সদরে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন তুহিন এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিমের প্রধান ডাঃ লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ সাধারণ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রধান ও ঔষধ বিতরণ করা হয়।
মেডিক্যাল টিম এ দুইজন এমবিবিএস ডাক্তার লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হোসেন ও ডাক্তার ক্যাপ্টেন আয়েশা সাধারণ রোগীদের সমস্যা দেখে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন।
এর আগেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে চাঁদপুরে সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনে সুরক্ষা নিশ্চিতে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর শহরসহ উপজেলাগুলোতে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন বাজার ও জনবহুল এলাকায় সাধারণ মানুষকে সচতেন করতে হ্যান্ড মাইকের সহায়তায় প্রচারণা চালান। পাশাপাশি গণজমায়েত এড়িয়ে চলার জন্যে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন তারা। চাঁদপুরসহ দেশের ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনীর ৩০৫টি দল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
চাঁদপুরের দায়িত্বে আছেন কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩-বি এর একাধিক দল। গত ২৪ মার্চ বেলা ১২টার সময় মেজর খায়েরের নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর একটি টিম প্রথমে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু করেন এ জেলার করোনারোধক কার্যক্রম। টানা ৪৫দিন স্থানীয় সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে মাঠে আছেন তারা।
দেশে বন্যা, আগুন ও সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবিলায় যে কোনো বিপদে ডাক পড়লেই পাশে বন্ধুর মতো এসে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী। আবার বিদেশের মাটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্য হিসেবে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন বন্ধু হেলমেটধারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা।
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অনেকে জীবনও উৎসর্গ করেছেন। এবারও দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে মাঠে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব শুরু থেকেই পালন করে আসছে।
শুধু যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা নয়, সেনাবাহিনী জাতীয় জীবনের যে কোনো সঙ্কটকালে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে আসছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে একটি ভিন্নধর্মী প্রতিকূল পরিবেশেও সেনাবাহিনী দেশকে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে নিজেরাও ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
যতক্ষণ সরকার চাইবে ততক্ষণ নাগরিক সেবায় সহায়তা প্রদান করবে সেনাবাহিনী- এমন দৃঢ় প্রত্যয় সেনা সদস্যদের। করোনার ধাক্কায় গোটা বিশ্ব যখন দিশেহারা তখন বাংলাদেশে পরিস্থিতি সামলে চলেছে দৃঢ়চিত্তে।