বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বর্তমান সংকটময় বিশ্ব অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের ন্যায় সব ধরনের রফতানিমুখী কোম্পানির করহারও ১২ শতাংশ করা হয়েছে যা বিসিআই’র দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। তবে রফতানির ক্ষেত্রে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে যা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রফতানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ পুনর্বহাল করার প্রস্তাব করছি। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে ডলারের মূল্য পুননির্ধারণ করে প্রবাসী আয়কে আরও উৎসাহিত করা জরুরি।
বিসিআই মনে করে— মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হলেও তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং বাজেটে ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা দরে চাল সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। আমরা এই চালের দর পূর্বের ন্যায় ১০ টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।
বিসিআই মূলত তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার নিয়ে কাজ করে চলেছে। বিসিআই মনে করে মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি, সব ধরনের ইউটিলিটির উপর মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছে। স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করায় আমরা স্বাগত জানাই। তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করে তহবিল বিতরণের জন্য সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ২.৫% কমানো হয়েছে যা বিসিআই স্বাগত জানায় তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে যা বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী কর বৎসরের ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী হয়রানিমুক্ত এবং সকলকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূরে ডিজিটাল করে কর অ্যাসেসমেন্ট সিসটেম ফ্রেন্ডলি করার প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পে কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭% থেকে কমিয়ে ৪% এবং পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে। অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করছি।
স্টীল পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল ও জিংক এলয় জাতীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর হার ৫% থেকে কমিয়ে ৩% করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশী পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের আয় ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত কারায় এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
কোভিড-১৯ জনিত কারনে কর্মহীনতা ও আয়- হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচী প্রভৃতির আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা ইতিবাচক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলে বিসিআই মনে করে।
করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন করার কাঁচামাল আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ককর মওকুফের সুবিধা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেন (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।