প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর সময়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ। বিস্তৃত উৎপাদন খাত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন; সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার মধ্যে অনুসরণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তার প্রমাণ হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু। যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সেতুর অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তারাই এখন বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এই সেতুর কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক শক্ত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ নিজেই নিজেকে উন্নয়নের একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। ভিশন-২০৪১ নামের এই রোডম্যাপের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে প্রকট দারিদ্র্যের অবসান এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া। আর এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়াই বাংলাদেশের লক্ষ্য। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অর্জন করছে বাংলাদেশ।
কৃষি থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জাহাজ নির্মাণ থেকে গার্মেন্টস পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প ভিত্তি ক্রমেই বৈচিত্র্যময় হচ্ছে এবং দেশটির রফতানি বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমান গতিতে রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে লাগাম, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা এবং বিলাসবহুল পণ্যের ওপর কর আরোপ প্রভৃতি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করছে, যেন সহজেই আমদানির চাহিদা মেটানো যায় বলেও উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে।
এছাড়া রফতানি বাড়ানো এবং আমদানি কমানোর বিষয়ে সরকারের নেওয়া নীতি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে শুরু করেছে। যদিও অর্থনীতিতে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। তবে সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বদ্ধপরিকর। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই স্তম্ভ হলো গার্মেন্টস এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
অনেক আশঙ্কা দূরে ঠেলে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাফল্যের কারণে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে তাদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে এসেছেন এবং মহামারির আগের মতো করেই আবারও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছর এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈঠকে করোনা মোকাবেলা এবং এর প্রভাব থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য নেওয়া নীতিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে।
শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার ঠেকাতে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের কথাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গত পাঁচ দশকে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে জীবিত জন্ম নেওয়া প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ২১ শিশুর মৃত্যু হয়। যেখানে ১৯৭১ সালে এই মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪১। সেই হিসাবে গেলো ৫০ বছরে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এখনও শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৫ জন। যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।