চিকিৎসক রবের স্ত্রী ফিরোজা মেহেরও চিকিৎসক। ২৫তম বিসিএস পাস করে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছিলেন তিনিও। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে পেশা ছেড়ে দেন। তবে পেশার প্রতি এখনও টান আছে তার। তাই করোনা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে স্বামী দূরে থাকলেও তিনি সামলে নিচ্ছেন সংসার। ফিরোজা মেহের বলেন, একই শহরে থাকলেও যেন আমরা আছি অনেক দূরে। ছেলেরা চাইলেও জড়িয়ে ধরতে পারছে না বাবাকে। মাঝখানে দু'দিন এখানে এসেছিলেন। কিন্তু দূর থেকে দেখেই আবার ফিরে গেছেন হাসপাতালে।
স্ত্রী-সন্তানদের স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে ডা. রব এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন তিনি। তার অধীনে আছেন ১২৪ চিকিৎসক। তারা সাতটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছেন বহির্বিভাগ, আইসিইউ ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে। প্রতিটি গ্রুপ হাসপাতালে কাজ করেন ১০ দিন। এরপর প্রতিটি গ্রুপ থাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। এটি শেষে ৬ দিন বাড়িতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন সব চিকিৎসক। এমন সুযোগ চাইলে নিতে পারতেন ডা. রবও। গত দুই মাসে একদিনের জন্যও হাসপাতাল ছাড়েননি তিনি। নেননি কোনো ছুটিও। প্রত্যেক করোনা রোগীর সঙ্গেই নিবিড়ভাবে সময় কাটিয়েছেন তিনি। তাই সরাসরি তার সংস্পর্শে আসা রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতকের ঘর। তার তত্ত্বাবধানে থেকে বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০০ রোগী। এখন পর্যন্ত মোট ২১৪ রোগীকে সেবা দিয়েছে এই হাসপাতাল। এখনও আছেন ১১৪ জন।
ডা. আবদুর রব বলেন, করোনাকে ভয় না করে এটি জয় করার চেষ্টা করেছি। মানুষের সেবা করার সুযোগ সব সময় আসে না। এটা ভেবে কাজ করে গেছি। পরিবার দূরে থাকায় অনেক সময় মন খুব খারাপ হয়। কিন্তু ১০০ রোগীর মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ মনে এলে ভুলে যাই সব দুঃখ-কষ্ট।
এত রোগীর সংস্পর্শে এসেও নিজেকে সুস্থ রেখেছেন কীভাবে? তিনি বলেন, নিয়ম-কানুন মেনে রোগীর সেবা করা যায় নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে ছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি নিবিড়ভাবে। ওষুধ দিয়েছি। পরীক্ষা করিয়েছি। ছাড়পত্রও দিয়েছি। কিন্তু আমার কোনো কোয়ারেন্টাইন লাগেনি। নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকি। আসলে ইচ্ছাশক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোনো কিছু অন্তর দিয়ে অনুধাবন করলে বাধা হবে না অন্য কিছু। ডা. আবদুর রবের জন্মস্থান চট্টগ্রামের সন্দীপের মগধরা ইউনিয়ন।