উন্নত রাষ্ট্রগুলো কিংবা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে করোনায় নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। ঐ সব রাষ্ট্রগুলো লকডাউনে থাকা মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা, বাসায় খাবার, স্ব স্ব একাউন্টে মাসের টাকা সব ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বলছে বাসায় থাক, সুস্হ থাক, যার যার ধর্ম কর্ম বাসায় পালন কর, নিরাপদে থাক। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। তাদের প্রত্যেকেই ল্যাপটপ, কম্পিউটার এসব বাসার মধ্যে প্রেরন করেছে। অনলাইনে স্কুল চলে। বাচ্চা স্কুলে যে ফ্রি খাবার খেত, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে খাবারের ঐ টাকা তাদের দেয়ার জন্য বিল উত্থাপন করেছে। রাষ্ট্র এ সব যে করতে পারছে তার একমাত্র কারণ রাষ্ট্রের কোমরের জোর আছে। এ জন্য পারছে। আর আমাদের রাষ্ট্রের কোমরের তেমন জোর নেই। জোর বা শক্তি (রিজার্ভ) যাতে না জমে, বিপদআপদে যাতে মানুষদের সাহায্য করতে না পারে সে জন্য দরদি ফরমাইয়েশ জারি করে।
বিশ্বের প্রত্যেক দেশে সরাসরি মানব বিধ্বংসী বা প্রজন্ম বিধ্বংসী নেশা মাদক দ্রব্য যেমন হিরোইন, আফিম এ সব নিষিদ্ধ। তবে কম ক্ষতিকারক মাদক যেমন মদ গাঁজা সিগারেট আবার জুয়া ক্যাসিনো, মদের বার, ড্যান্সিং হল, দেহ ব্যবসা এসব সগৌরবে বহাল রেখেছে। কারণ ঐ সব থেকে সিংহভাগ রাজস্ব আসে। আর ঐ রাজস্ব দিয়ে রাজ্যের ফ্রি হাসপাতাল, ঔষুধ, স্কুল, বাচ্চাদের যাতায়াত এ খাতে সরাসরি ব্যয় হয় । বাকী রাজস্ব আসে অস্ত্র ব্যবসা থেকে । বিপরীতে ঐ সব লেজুর ভিত্তিক সংস্হা দিয়ে গরীব রাষ্ট্রগুলোকে ভুয়া উপদেশ দিয়ে বলে, তোমরা অস্ত্র তৈরি, সিগারেট তৈরি, গাঁজা চাষ, দেহ ব্যবসা, মদ বিয়ার বিক্রি বা উৎপাদন করতে পারবে না । কারন এ সব করলে গরীব মানুষ মারা যাবে । রাষ্ট্রে বিরাজমান ধর্মের ক্ষতি হবে। আবার মুসলিম অধ্যুষিত ইউনাইটেড আরব আমিরাত লাইক সৌদী দুবাই আবুধাবী কুয়েত এ সব দেশে রাশিয়া আমেরিকা চীন দু ধরনের বাণিজ্য করে তেলের বিনিময়ে। প্রথমত রাশিয়া চীন অস্ত্র ও তাদের দেশের ইয়ং নারী, শিক্ষিত শ্রমিক প্রেরন করে সবচেয়ে বেশী। ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ খারাপ কাজ গুলো বেশী সংগঠিত হয় ঐ সব দেশে। কিন্তু ডাব্লিউএইচও ওখানে কোন ফরমাইয়েশ দেয় না। ওখানে তো করোনা মহামারী চলে, সেখানে কী বিডি সিগারেট, মদের বার, দেহ ব্যবসার বার, ক্যাসিনো ব্যবসার নিষিদ্ধ করেছে। হয়ত করোনাকালে স্হগিত করেছে। যেমন করেছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য কানাডা।
করোনায় হাজার হাজার মানুষ উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে মারা যাচ্ছে। কই ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগনাইজেশন তো উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এসব বিক্রি উৎপাদন বন্ধে কোন এ্যাডভাজারি দেয় না। গরিব রাষ্ট্রগুলোতে কেন? বরং আমেরিকার অনেক রাজ্যে গাঁজা বিক্রি ওপেন করেছে? মদ মাগির ব্যবসা তো আছেই। কানাডা শত শত একর ভূমিতে গাঁজা চাষ করছে, আরও প্ল্যান করেছে শ্রমিক নেয়ার কথা, করোনাকালে স্হগিত হয়েছে। এসব রাষ্ট্রে তো ফরমাইয়েশ দেয় না। করোনাকালে কানাডা সে দেশের মানুষকে যে সহযোগিতা করেছে, তা বিশ্বের মধ্যে অদ্বিতীয়। কই ওদের গাঁজা উৎপাদন বিক্রিতে তো বাঁধা নেই।
উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোটের উপদেশে এক সময়ে বাংলাদেশ কে বলা হলো যত জুট মিল, কটন মিল রাষ্ট্রয়ত্ব প্রতিষ্ঠান আছে সব বিরাষ্ট্রীয়করন কর। গাড়ি, হাসপাতাল, ব্যাংক সব বেসরকারী খাতে দিয়ে দাও। সে ধারাবাহিকতায় শত শত জুট মিল কটনমিল পেপার মিল পাট কল বেসরকারীকরণ হয়নি বরং বন্ধ হয় পড়ে আছে। রেলে কিছু লাইন ছাড়া লোকাল সব রেল এখন বেসরকারী খাতে, লোকাল ও দুরপাল্লার সব বাস লঞ্চ এখন বেসরকারী। সরকারের কি আছে? মন্ত্রণালয় আর মন্ত্রী।
বিপরীতে নিউইয়র্ক রাজ্যে বাস রেল দূরপাল্লার যানবাহন হাসপাতাল সব তো ফেডারেল না হয় সিটির হাতে। কই এ সব বেসরকারীকরণ করতে পারেনি। মদ গাঁজা ক্যাসিনো বার সিগারেট কোম্পানীগুলো থেকে আদায় করে সর্বোচ্চ ট্যাক্স। বড় বড় অনেক চেইন স্টোর এ ফেডারেলের শেয়ার রয়েছে। ওরা পারে না এসব বেসরকারী কিংবা মদ গাঁজা সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করতে।
বাংলাদেশে দশ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। করোনাকালে ওরা কিভাবে চলবে, কিভাবে চিকিৎসা পাবে? কই দশ লাখ মানুষের জন্য ডাব্লিউএইচও একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করে দিল না। কেবল বিড়ি সিগারেট মদ মানুষের ক্ষতি করবে? করোনায় মারা যাবে বেশী এ রকম চিটি দিয়ে সরকারকে সর্তক করল। সরকারও ঐ সব বন্ধ করে দিল। কিন্তু যারা কাজ করত তারা যাবে কোথায়? বিকল্প কর্মসংস্হান হয়েছে?
তারপরও সরকার যতটুকু পারছে সহযোগীতা যে করছে না, তা নয়। কিন্তু এ দুর্যোগই শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। রাষ্ট্রের কাছে টাকা না থাকলে বা আয়ের উৎস না থাকলে রাষ্ট্র কিভাবে সার্ভাইব করবে?
সৈয়দ মাহমুদ তসলিম
প্রবাসী সাংবাদিক, বাফেলো, যুক্তরাষ্ট্র